৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে কালিমালিপ্ত দিন : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত দিন। সাত বছর আগে ২০১৪ সালের এই দিনে সারা দেশে ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীবিহীন একতরফা, বিতর্কিত, প্রতারণামূলক, হাস্যকর ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রহসনমূলক একদলীয় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে প্রত্যাখ্যাত, জনধিকৃত একদলীয় নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সারা দুনিয়ায় নিজেদের হেয় প্রতিপন্ন করে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।
এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণহত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন চালিয়েও ন্যূনতম ভোট আদায় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সারা দেশে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল একদম ফাঁকা।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের কলঙ্কিত রেকর্ডকে ভেঙে ফেলে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। তাদের সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও কারচুপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিয়েছিল ২৯৩ আসন। মাত্র সাতটি আসন বিরোধী দলকে দেওয়া হয়। ৭৩ সালের নির্বাচনে জাসদ ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। জাসদকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র একটি আসন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে নতুন নয়।’
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই পাত্তা দেয় না। জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী, অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তা ছিল একতরফা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, জালভোট প্রদান, ভোট ডাকাতি, মৃত ব্যক্তির ভোট প্রদান, গায়েবি ভোট, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ অভিনব ভোট সন্ত্রাসের বহু বিচিত্র দৃশ্য, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে এবং হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন প্রায় সব রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত দৃশ্যমান হয়। তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মিসেস সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কী হুমকি দিয়েছিলেন, তা এরশাদ নিজেই গণমাধ্যমে বলেছিলেন। তার পরও জাতীয় পার্টি তাদের সব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পর বন্দুকের নলের মুখে ভয় দেখিয়ে কয়েকজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গৃহপালিত বিরোধীদলের আসনে বসানো হয়। এটির প্রমাণ, এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে প্রত্যেক কেন্দ্রেই আমরা দলীয় চেতনার ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ দিয়েছি। তারপরও আওয়ামী লীগের ভয় কাটেনি। যদি জনগণ অন্য কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করে ফেলে, এমন আতঙ্কে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো ১৫৩ জন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজ দলীয় এমপি হিসেবে ঘোষণা করে। বাকি আসনগুলোতে শতকরা পাঁচ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণ সেই নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো এমন ন্যক্কারজনক ও নজীরবিহীন নির্বাচন কেবল আওয়ামী লীগের দ্বারাই সম্ভব। এ কারণেই দেশের জনগণ একটা বিষয় বিশ্বাস করে, সেটি হলো- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে-দেশে স্থিতিশীল, প্রাণবন্ত, দায়িত্বশীল, সুগ্রন্থিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকবে না। আর দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকলে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকবে না। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের ঘৃণ্য কালিমালিপ্ত পথ ধরে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটারদের পরিত্যাগ করা হয়েছে। এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রশাসন মিলেমিশে নব্য নাৎসিবাদে পরিণত হয়ে তার হিংস্র দাঁতের কামড়ে সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিষময় করে তুলেছে। বাস্তবিক অর্থে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী অপকর্মের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রধান মালিক জনগণকে পরাজিত করেছে।’