‘গ্যাসের দাম বাড়লে, বাড়বে দৈনন্দিন ব্যয়’
আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের দাম সাড়ে ৬৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। এক চুলার গ্যাসের দাম ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা করা হচ্ছে। গ্যাসের দামের এ বিপুল বৃদ্ধি সাধারণ নাগরিকের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়াবে। বাড়বে পরিবহন খরচ ও খাদ্যশস্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
আজ সোমবার গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তৎপরতার প্রতিবাদে রাজধানীর কমরেড নির্মল সেন মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের জন্য বর্তমান দাম ৬৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর এক চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ার হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩৫ থেকে বেড়ে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা, গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম ৭ টাকা থেকে বেড়ে ৯ টাকা থেকে ১০ টাকা এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত ক্যাপটিভ বিদ্যুতের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ টাকা হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক, চা-বাগান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ছে।
ফিরোজ আহমেদ আরো বলেন, ‘গ্যাস খাতে বিপুল দুর্নীতির বোঝাও জনগণকেই টানতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে আইওসির গ্যাস ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যয় উসুল, কম্প্রেসর স্থাপন ও পরিচালনা, গ্যাসের দাম পরিশোধে ডিসকাউন্ট সুবিধা না নেওয়া এবং যন্ত্রপাতি আমদানি এসব ব্যাপারে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পেট্রোবাংলা অভিযুক্ত। ওই প্রতিবেদনে আইএমইডির সূত্রে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ মিটার ও মিটার টেম্পারিং, গ্যাস অপচয় এবং অবৈধ সংযোগের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সরকারি ক্ষমতাধররা চোরাই সংযোগ সাধারণ গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে জনগণের কোটি কোটি টাকা চুরি করছে, এর সঙ্গেও সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে।’
ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘অবিলম্বে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না এলে আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান চালানো হবে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চল ও এলাকায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিলি, গণসংযোগ কর্মসূচিও চলবে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষিত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাকিদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ।