ভালো ফলটাই এখন ফাতেমার দুশ্চিন্তা
বাড়ি বলতে একটি মাটির ঘর। তাও অন্যের জমিতে। সেই ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন পরিবারের পাঁচ সদস্য। পরিবারের অন্যরা ঘুমিয়ে গেলে মিটিমিটি হারিকেনের আলোয় রাত জেগে পড়ত ফাতেমা বেগম। মা তারামন বেগম ঘরের এক কোনে কয়েকটি হাঁস-মুরগি পালতেন। সেই ডিম বিক্রি করে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতেন তিনি।
আজ শনিবার যখন বাড়িতে খবর আসে ফাতেমা এসএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে, তখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে মা-মেয়ে। এ কান্না যতটা না আনন্দের, তার চেয়ে বেশি হতাশার।
তারামন বেগমের কথায়, ‘ফাতেমা শহরের কলেজে পড়ে বড় উকিল হতে চায়। এমন অনেক দিন গেছে, স্কুলে যাওয়ার আগে মেয়েটার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারিনি। মেয়েটার পড়ালেখার আগ্রহ দেখে আমি অতিকষ্টে তার খরচ চালিয়ে গেছি। আমাদের এক কাঠা জমিও নেই। হাতে কাজ করে পেটে খাই। সংসারই ঠিকমতো চলে না। এখন আমি মেয়েকে শহরের ভালো কলেজে কীভাবে পড়াবো?’ তারামনের চোখের পানি সংক্রমিত হয় পরিবারের অন্যদের চোখেও।
রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার আকচা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ফাতেমা বেগম এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফাতেমাদের বাড়ি তানোর পৌর এলাকার আকচা ফকিরপাড়া গ্রামে। বাবা ও মা দুজনই শ্রমজীবী। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে ফাতেমা দ্বিতীয়।
ফাতেমার বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এমন অনেক দিন গেছে ঘরে আমাদের খাবার ছিল না। মেয়ে আমার না খেয়ে স্কুলে গেছে। আমার খুব ইচ্ছা মেয়েকে শহরের ভালো কলেজে পড়ানোর। আমার ইচ্ছে পূরণ হবে কি না জানি না।’
নিজের কৃতিত্বে খুশি ফাতেমা বেগম বলে, ‘আমি অনেক দূর যেতে চাই। জানি না পথের শেষে পৌঁছাতে পারব কি না।’
তার লেখাপড়ার জন্য মায়ের চেষ্টা আর বাবার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় আর কথা শেষ করতে পারে না ফাতেমা। বেশ খানিকক্ষণ পর ওড়নায় চোখ মুছে স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করল না সে।
আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘গরিবের ঘরে জন্ম নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করে ফাতেমা আজ সফল হয়েছে। আমরা দোয়া করি, সে বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের সেবা করবে। তার ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য কামনা করি।’
প্রধান শিক্ষক জানান, এবার তার স্কুল থেকে ২৮ জন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এর মধ্যে পাস করেছে ২৭ জন। আর ছয়জন পেয়েছে জিপিএ ৫।