বিসিএসে তৃতীয় লিঙ্গকে ফি সুবিধা, আনতে হবে সনদ!
৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সাধারণ প্রার্থীরা ফি দেবেন ৭০০ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীদের দিতে হবে ১০০ টাকা। তবে এ জন্য তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের প্রমাণপত্র আনতে হবে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে। আজ রোববার সরকারি কর্মকমিশনের প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করা সংগঠকরা বলছেন, বিষয়টি ‘আপত্তিকর’। ‘সচেতন শিল্পী সংঘের’ সভাপতি ইভান আহমেদ কথা এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও হয়রানির আশঙ্কা করছেন।
ইভান আহমেদ কথা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মানুষ হিসাবে আমরা অধিকার চাই। সমাজে অন্য হয়ে যেতে চাই না। কেউ যেন না বলে, তোমরা আলাদা, স্বাভাবিক নও। এ ধারণার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারও এগিয়ে এসেছে। তবে নিজেদের প্রমাণ করার জন্য যদি সিভিল সার্জনের কাছে যেতে হয়, সেটা আমাদের কাছে আপত্তিকর।’
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের এই নেত্রী বলেন, ‘নির্দেশনাটা শুনেই মানসিক একটা কষ্ট হয়। আমাদের শরীর দেখে চিকিৎসক আমাদের সনদ দেবেন। পুরুষ বা নারীদের ক্ষেত্রে সেটা করা হচ্ছে না। এতেই তো আলাদা হয়ে গেলাম।’
লিঙ্গ চিহ্নিত করার অন্য পদ্ধতি কী হতে পারে, তা সরকারকে ভালোভাবে ভাবার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সরকারি কর্মকমিশনের এ বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন তানিয়া হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সুযোগ দিচ্ছে। এ ব্যাপারটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তা হওয়া উচিত যথাযথ সম্মানের সঙ্গে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা এখনো আমাদের সমাজে অধিকার পায়নি। বাংলাদেশের মতো দেশে বিষয়টি এখনো স্পর্শকাতর। এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে তারা আরো বিব্রত হয়। আর তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে কোনো কার্যালয় থেকে সনদ নিয়ে আসাটা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বিব্রতকর হতে পারে।’
লিঙ্গ নির্ধারণ পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের প্রভাষক কুন্তলা চৌধুরীও। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “সিভিল সার্জনের কাছ থেকে সনদ আনার ব্যাপারে অনেকে আগ্রহ নাও দেখাতে পারে। ব্যাপারটি তৃতীয় লিঙ্গের কারো ওপর মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। প্রচলিত সমাজে সে ছেলেমেয়ের বাইরে ‘অন্য’ হয়ে আছে। এ রকম পদ্ধতিতে সে নিজেকে বাস্তবিক অর্থেই ‘অন্য’ হিসেবে ভাববে। যা তাঁর জন্য ইতিবাচক নয়।”
কুন্তলা আরো বলেন, লিঙ্গ চিহ্নিত করার ব্যাপারে সরকার পুলিশের সাহায্য নিতে পারে। পাসপোর্ট বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন পুলিশি যাচাই হয়, তেমনি পুলিশ বাড়িতে এবং সমাজে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েও সনদ দিতে পারে।
২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সভায় নারী-পুরুষের পাশাপাশি হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।