হেলিকপ্টারে করে সমাবেশে গেলেন ছাত্রলীগ সভাপতি
হেলিকপ্টারে করে পাবনার ঈশ্বরদীতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। আজ শুক্রবার বিকেলে তিনি ঢাকা থেকে ভাড়ায় চালিত একটি হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী আসেন।
একটি ছাত্র সংগঠনের কোনো নেতার এমন হেলিকপ্টারে করে সমাবেশে যোগ দেওয়ার ঘটনায় পুরো পাবনা জেলায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের পরিবার এই অর্থের জোগান দিয়েছে বলে মন্ত্রীর ছেলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিমন্ত্রীর পরিবার সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা কমিটির সভাপতিকে না জানিয়ে শনিবার ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সম্মেলন করার উদ্যোগ নেয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে দিয়ে ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করাতে এবং নিজেদের পক্ষে শক্তি দেখাতে ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শফিকুর রহমান কনক ঈশ্বরদী পৌর সদরে আজ শুক্রবার জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে। কনক ছাত্রলীগে পদ পেতে আগ্রহী। অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের পরিচালক রাসেল আহমেদ তুহিন। তিনি সড়কপথে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ পারটেক্স অ্যাভিয়েশনের ভাড়ায় চালিত একটি হেলিকপ্টারে করে আজ বিকেলে ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী আসেন।
শফিকুর রহমান কনকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রীর মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজাবিন শিরিন পিয়া ও পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবলী সাদিক।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, জেলা ছাত্রলীগের কোনো অনুমতি ছাড়াই শনিবার ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সম্মেলন করা হচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে হেলিকপ্টারে করে ছাত্রলীগ সভাপতি সমাবেশে যোগ দেওয়ায় জেলার অনেক নেতা তাঁর আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল আহাদ বাবু বলেন, বর্তমানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো আদর্শ নেই। ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদক হলেই তাঁরা মনে করেন যে দেশের গভর্নর হয়ে গেছেন। আসলে আমরা যখন ছাত্রলীগ করেছি, তখন মাত্র পাঁচ-দশ টাকা পকেটে নিয়ে সারা দিন হেঁটে কাজ করেছি। অথচ বর্তমানে ছোটখাটো নেতারাও মাইক্রোবাস নিয়ে চলাফেরা করেন। বিষয়টি নিয়ে বলার মতো কিছুই নেই। ছাত্ররাজনীতি বর্তমানে ব্যবসায়ী সংগঠনে পরিণত হয়েছে।’
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ছাত্রলীগ সভাপতির হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী হিসেবে মনে করি এই সংস্কৃতি শোভনীয় নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে ছাত্রলীগ নেতার এমন হেলিকপ্টার বিলাসিতা মোটেও কাম্য নয়।’
এ বিষয়ে জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নেতার এমন বিলাসিতায় তাঁর আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এতে দলের ও ওই ছাত্র সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তবে বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের খতিয়ে দেখা উচিত। তবে তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি হেলিকপ্টার নিয়ে এসেছেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। যদি রকেট নিয়ে আসত তাহলে আশ্চর্য হতাম। অবাধ লুটপাটের দেশে সবই সম্ভব।’
হেলিকপ্টারে করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শফিকুর রহমান কনক বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে দিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশ উদ্বোধন করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকা থেকে সড়কপথে ঈশ্বরদী আসার সময় ছিল না তাঁর। তাই আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করে তাঁকে আনা হয়।’
এদিকে হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদী আসার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হলে রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ মাইক্রোবাসে করে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।