আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় করা দুই মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মামলার পাঁচ আসামিকে।

তাঁরা হলেন—সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও বরখাস্ত হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট (চাকরিচ্যুত) কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত কমান্ডার এম এম রানা, চাকরিচ্যুত মেজর আরিফ ও চাকরিচ্যুত ল্যান্স নায়েক বেলাল।

আজ সোমবার সকালে কাশিমপুর কারাগার জেল থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এই পাঁচ আসামিকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে এঁদের নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মামলার বাকি ১৮ আসামি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারেই রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে আজ এ রায় ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে বিচারক আদালতে প্রবেশ করেছেন।

গত ৩০ নভেম্বর দুই মামলার ওপর শুনানি শেষে ১৬ জানুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি আছেন। এঁদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় মোট ১০৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে, তাঁর গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র‌্যাব-১১।

পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ‌আলাদা দুটি মামলা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

এর পর বিভিন্ন সময়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক থাকেন ১৩ জন।

এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ১৩ নভেম্বর সাত খুনের দুটি মামলাসহ ১১ মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। সাত খুনের মামলায় হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র‌্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম ও জজকোর্টে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। তবে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তাদের অভিযোগপত্র ‘নির্ভুল ও চমৎকার’।

৩৫ আসামি কে, কোথায়?

সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। নূর হোসেন ছাড়া বাকিরা হলেন—সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা, র‌্যাব সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) পুর্ণেন্দু বালা, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।

পলাতক ১২ জন

পলাতকদের মধ্যে আছেন—নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ও শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামাল উদ্দিন, র‌্যাবের করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, আব্দুল আলী, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।