প্রমাণ হলো ন্যায়বিচার পাওয়া যায় : কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে যে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়, তার প্রমাণ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায়।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপপরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাদের এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আশা করি, নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে। অপরাধী যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, অপরাধ করে কেউ পার পেতে পারবে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও বন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
সাত খুনের দুই মামলায় প্রধান আসামি নূর হোসেন ও র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের নথি অনুযায়ী এ মামলার মোট ৩৫ আসামির মধ্যে যে ২৬ জন ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন তাঁরা হলেন—নূর হোসেন, মো. মিজানুর রহমান দীপু, চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, চাকরিচ্যুত মেজর মো. আরিফ হোসেন, চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা, মো. মোখলেছুর রহমান, মো. মহিউদ্দিন মুন্সী, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, সিপাহি আবু তৈয়ব, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহ জাহান, জামাল উদ্দিন, আসাদুজ্জামান নূর, পুর্ণেন্দু বালা, আরওজি আরিফ হোসেন, সৈনিক আল আমিন, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, বেলাল হোসেন, শিহাব উদ্দিন, মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, আবুল বাশার, রহম আলী ও এমদাদুল হক।
তাঁদের মধ্যে প্রধান আসামি নূর হোসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন।
এই ২৬ জনের মধ্যে পলাতক রয়েছেন নয়জন। তাঁরা হলেন—মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনসী, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।
মামলার ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে নাসিকের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল পৃথক দুটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ মণ্ডল।
এরপর বিভিন্ন সময়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক থাকেন ১৩ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ১৩ নভেম্বর সাত খুনের দুটি মামলাসহ ১১ মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। সাত খুনের মামলায় হত্যার দায় স্বীকার করে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম ও জজ কোর্টে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। তবে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তাদের অভিযোগপত্র ‘নির্ভুল ও চমৎকার’।