সাত খুন : এখন ঠিকমতো খাবারও পায় না তারা
নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী চন্দন সরকারের ড্রাইভার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দুজন স্ত্রী ছিল তাঁর। দুই পরিবারের সন্তান সংখ্যা পাঁচ। এর মধ্যে তিন মেয়ে আর দুই ছেলে।
আর এই সব মানুষের মধ্যে উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন ইব্রাহিম। নারায়ণগঞ্জে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল যে সাতজনকে গুম করে হত্যা করা হয় তাঁদের মধ্যে পড়ে যান ইব্রাহিমও।
ইব্রাহিমকে হারিয়ে এখন অকুল পাথারে বসেছে তাঁর দুই পরিবারই। ইব্রাহিমের প্রথম স্ত্রীর নাম মাহমুদা, আর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম হনুফা। মাহমুদা আর ইব্রাহিমের সংসারে এক ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে ইসমাইল হোসেন রনি দশম শ্রেণিতে পড়ে, আর মেয়ে সীমা মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
অন্যদিকে হনুফা-ইব্রাহিমের সংসারে এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মারিয়া চতুর্থ শ্রেণিতে, মারজিয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সবচেয়ে ছোট ছেলের নাম জোনায়েদ। তার বয়স চার বছর।
আজ সোমবার সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে ইব্রাহিমের মা-বাবা-বোনসহ সন্তানদের নিয়ে আদালত চত্বরে হাজির হন হনুফা ও মাহমুদা। দুজনেই জানালেন, স্বামীর মৃত্যুর পর খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তাঁরা দুজনেই অন্যের বাসায় কাজ করে যা পান তা দিয়েই সংসার চালান। এসব দিয়ে কোনোরকমে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাঁদের। তবে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে। এই খরচ চালাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় হনুফা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা করেন তিনি।
হনুফার অভিযোগ, মুজিবর নামে নূর হোসেনের এক সহযোগী রয়েছে, যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়নি। সেই মুজিবর এখন বিভিন্নভাবে তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি রায়ের পর ভিটেমাটি ছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সমাধান প্রত্যাশা করেছেন হনুফা। পরিবারের নিরাপত্তাসহ অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানের অনুরোধও করেছেন তিনি।
রায় প্রসঙ্গে কথা হয় হনুফার মেয়ে মারিয়া আর মারজিয়ার সঙ্গে। বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই শিশু। বাবার স্মৃতির কথা জানতে চাইলে মারিয়া জানায়, সে আম খেতে খুব পছন্দ করে, তাই তার বাবা তাকে অনেক আম খাওয়াতেন। আর বাবা মারা যাওয়ার পর ঠিকমতো তিনবেলা খাবারও পায় না তারা।
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার ডুকরে কেঁদে উঠছিল দুই বোন।
কথা হয় ইব্রাহিমের প্রথম স্ত্রী মাহমুদার সঙ্গেও। জানান, তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যেই অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসারের খরচ জোগানোর চেষ্টা করেন।
এই দম্পতির বড় ছেলে রনি জানায়, স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে সে। এই মুহূর্তে তার পড়ালেখার খরচ চালিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে কষ্টের। সামর্থ্যবান কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেবেন বলে আশা করে রনি।