পাকিস্তানের সুশীল সমাজের প্রশ্নের ‘কড়া জবাব’ প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সুশীল সমাজের তোলা এক প্রশ্নের ‘কড়া জবাব’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় নিয়ে একটি সেশনে মতবিনিময়কালে এ জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সেশনে অংশ নিয়ে পাকিস্তানের সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধের নামে বাংলাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাঁদের আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে সম্বোধন করছেন, তাঁরা সকলেই ১৯৭১ সালে অপরাধ সংগঠনের সময়ে নবীন ছিলেন এবং তাঁরাই এই গণহত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা সে সময় জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অপরাধেই তাঁদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার এবং দণ্ড প্রদান করা হয়।’
ওই সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রেনিল বিক্রমসিংহে, ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামান ও সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াটা কোনো অংশেই সহজ কাজ নয়।
ওই সেশনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোনো প্রভাব পড়বে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্যই এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উন্নততর এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রশ্নের জবাব দেওয়া ছাড়াও এ সময় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগে নেওয়া বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৪০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) কার্যকারিতা হারানোর অভিযোগকে উড়িয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই আঞ্চলিক জোট খুব ভালোভাবেই সক্রিয় আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কের কার্যকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আট জাতির এ আঞ্চলিক সংস্থাটি খুব ভালোভাবে সক্রিয় আছে এবং তিনি মনে করেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরো অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।