দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনের দিকে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ, বাসদসহ দেশের ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। দলগুলো তাঁর কাছে ইসি গঠনের বিষয়ে প্রস্তাব দেয়।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী এর আগেই কমিশন গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুন ইসি কী প্রক্রিয়ায় গঠন করা হবে, কোন ব্যক্তিরা এতে থাকবেন—এসব নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ।
এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তে অটল থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। তবে কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তাঁরা জনগণের রাজনীতি করেন। সে ক্ষেত্রে জনগণের ভাবনার বাইরে যাবে না তাঁর দল।
এ ছাড়া আজ শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানিয়েছেন, সর্বজনগ্রাহ্য ইসি গঠনের আলোচনার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা করতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। তবে তারা ইসি গঠনের রাষ্ট্রপতির ভূমিকার বিষয়ে আশাবাদী।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে সমাধানের আগে আরেক বিষয় টেনে আনার প্রস্তাবকে ‘সৎ উদ্দেশ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার হবে। এ নিয়ে সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অংশ নেওয়া অন্যান্য দলের নেতারা আপাতত কিছুই বলতে রাজি নন। তাঁরা একটা সুন্দর পরিবেশের প্রত্যাশায় গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এনটিভি অনলাইনকে একাধিক দলের প্রতিশ্রুতিশীল নেতা জানিয়েছেন, যদি ইসি মনঃপুত না হয়, তবে কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন আপাতত তা-ই ভাবছেন তাঁরা।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাঁরা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।
গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বিরূপ প্রতিক্রয়া আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের যা বলার ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি। নতুন করে তেমন কিছু বলার নেই। শুধু বলব, আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা সংবিধান পরিপন্থী কিছু করবেন, তাঁরা আইন অনুযায়ী সে ফল ভোগ করবেন।’
ইসি গঠনের পর কোনো সংকট হতে পারে এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা সঠিক একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে যদি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন না করতে পারি, তাহলে আমরা কিন্তু দারুণ সংকটের দিকে যাব এবং আমরা এর মধ্যে সংকটে আছি।’
বদিউল বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পর নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ‘বল এখন রাষ্ট্রপতির কোর্টে’। রাষ্ট্রপতি দুইভাবে বলটা খেলতে পারেন। অনুসন্ধান কমিটি, সার্চ কমিটি করার তিনি উদ্যোগ নিতে পারেন। কিন্তু এটা আমি মনে করি না, সমস্যার সমাধান করবে। এর মাধ্যমে বিতর্ক এড়ানো যাবে না। তারপর দেখা যাক কী হয়।”
তবে আপাতত কিছু বলতে রাজি নন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, “সার্চ কমিটি কী নামগুলো নিয়ে আসে, সেটা দেখি। এই পাঁচজন কারা হতে পারে বা ১৫ জন নাম যে দিল, এর মধ্যে ঠিকভাবে আসলে মানুষ যা চাইছে, প্রত্যাশামতো নাম গেছে কি না, দেখি না এগুলো। কিন্তু এগুলো না দেখে আমরা আগে আগে কথা বলছি কেন? তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে গেলাম কেন?”