সাত খুনের রায় : পেপারবুক দ্রুত তৈরির নির্দেশ
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার রায়ের পেপারবুক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা।
আজ রোববার দুপুরে মামলার নথিতে স্বাক্ষরের পর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে এ নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ।
এর আগে চলতি মাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের দুই মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ আসামির প্রত্যেককেই সাজা দেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে ২৬ জনকে দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় দেওয়ার সময় কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি আছেন। এঁদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় মোট ১০৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে, তাঁর গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আলাদা দুটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।
এর পর বিভিন্ন সময়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক থাকেন ১৩ জন।
এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ১৩ নভেম্বর সাত খুনের দুটি মামলাসহ ১১ মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। সাত খুনের মামলায় হত্যার দায় স্বীকার করে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম ও জজকোর্টে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। তবে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তাদের অভিযোগপত্র ‘নির্ভুল ও চমৎকার’।