দলনিরপেক্ষ ইসি চান চার বিশিষ্ট নাগরিক
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা চারজনই সৎ, দলনিরপেক্ষ ও সাহসী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পক্ষে জোর দিয়েছেন।
আজ বুধবার সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আবু হেনা।
সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে প্রত্যেকেই যেটা জোর দিয়ে বলেছি, সেটা হলো, যিনি এ দায়িত্বে আসবেন, তাঁকে বিবেকবান, সৎ, দলনিরপেক্ষ ও সাহসী হতে হবে।’ তিনি বলেন, সার্চ কমিটি সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনের সঙ্গে যে বৈঠক করছে, তা শুভ পদক্ষেপ।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জোর দিয়ে বলেছেন, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিরোধ আছে, এমন কোনো ব্যক্তিকে ইসিতে যেন দায়িত্ব দেওয়া না হয়। তবে এই কাজটি করতে গিয়ে সার্চ কমিটিকে নানা হুমকি দেওয়া হতে পারে। এতে নতজানু না হয়ে সার্চ কমিটিকে এগিয়ে যেতে হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়ে গোলাম সারওয়ার বলেন, নির্বাচন কমিশন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করলে ভালো হয়।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ঐতিহাসিকভাবে এই দায়িত্ব অনেক বড়। আগামী নির্বাচনের ওপর ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের বিষয়টি নির্ভর করবে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি যাদের বক্তব্য নিচ্ছে, তাদের বক্তব্যগুলো যেন ইসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সার্চ কমিটির সদস্যদের বিষয়ে মাহফুজ আনাম বলেন, তাঁরা অত্যন্ত আন্তরিক। তাঁদের প্রতি তাঁর আস্থা আছে।
আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বিগত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইসি গঠন হয়েছে। এবার নির্বাচিত সরকারের সময় হচ্ছে। তাই ইসিতে থাকা লোকজন যেন বিতর্ক পাশ কাটিয়ে যান।
এর আগে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে চারজনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি।
গতকাল মঙ্গলবার ২৬টি রাজনৈতিক দল থেকে পাওয়া নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে ২০ জনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে সার্চ কমিটি।
এর আগে গত সোমবার দেশের ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেন সার্চ কমিটির সদস্যরা।
গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ইসি গঠনে গঠিত সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সোমবার দেশের ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত নেয় কমিটি।
তাঁরা হলেন বিচারপতি আবদুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ, আইনজীবী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নুরুল হুদা।
এর আগে সার্চ কমিটির সদস্য ও আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন সার্চ কমিটির অপর সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
নতুন ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।
এর পর রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা), বিএনপিসহ ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এসব বৈঠকের পর গত ২৫ জানুয়ারি সার্চ কমিটির বিষয়ে একটি চিঠি বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।
২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে চার সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটিই বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে। ৮ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে।