সাত খুন মামলার ফাঁসির আসামি মাগুরায় গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট এনামুল কবিরকে মাগুরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন তিনি।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের ভায়না মোড় এলাকা থেকে শালিখা ও সদর থানা পুলিশের যৌথ একটি দল এনামুলকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম তারিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এনামুলের বাড়ি মাগুরা শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামে।
পুলিশ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আসামি এনামুল কবিরকে মাগুরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফিরোজ মামুনের আদালতে হাজির করে। আদালত তাঁকে মাগুরা জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে বিচারক ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
পলাতকদের মধ্যে আছেন—প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ও শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামাল উদ্দিন, র্যাবের করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, আবদুল আলী, তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।
সাত খুন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন—মূল আসামি নূর হোসেন, সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা, র্যাব সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) পুর্ণেন্দু বালা, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৩ জন কারাবন্দি আছেন। এঁদের মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় মোট ১০৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে, তাঁর গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আলাদা দুটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।