সংসদ চত্বরে সুরঞ্জিতকে শ্রদ্ধা
প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টেরিয়ান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বর্ণাঢ্য কর্মময় স্মৃতি জড়িয়ে আছে যেখানে, সেই জাতীয় সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে আজ রোববার শেষবারের মতো নেওয়া হয় দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে দেশের রাজনীতির উজ্বল নক্ষত্র সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে জানানো হয় শেষ বিদায়।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শ্রদ্ধা জানান। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।
পরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমাগারে। সেখান থেকেই আগামীকাল সোমবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর নিজ জেলা সুনামগঞ্জ এবং নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লায়। আগামীকাল বিকেলে শাল্লায় জন্মস্থানে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার ভোর রাত ৪টা ২৪ মিনিটে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সভাপতি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। গত শুক্রবার ফুসফুসের সমস্যার জন্য রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। শনিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাঁকে প্রথমে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরে রাতেই তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্ম ১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামে। ছাত্র জীবনেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। হাওরাঞ্চলের ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলনে দীর্ঘদিন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রবীণ এ পার্লামেন্টারিয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। পরে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন।
নব্বই দশকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও একতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রেলমন্ত্রী নিযুক্ত হন। যদিও সহকারীর অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর তিনি পদত্যাগ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিপরিষদে রাখেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদে সব সময় সরব এ সংসদ সদস্য একজন অভিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।