২৩ ঘণ্টা পর মুক্ত উপাচার্যসহ ২৫ শিক্ষক
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) কর্তৃপক্ষ। দাবি আদায়ে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ২৫ শিক্ষককে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
এরপর আজ রোববার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে দুপুর দেড়টার দিকে পরীক্ষার ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করা হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে উপাচার্যের কার্যালয়ের বারান্দা থেকে চলে যায় শিক্ষার্থীরা। ফলে টানা ২৩ ঘণ।টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান উপাচার্যসহ অন্যান্য শিক্ষক।
একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইকবাল মতিন জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে পরীক্ষায় ‘৩৩ ক্রেডিট’ পদ্ধতি বাতিলের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৪ ও ১৫ সিরিজের ক্লাস-পরীক্ষার ওপর জারি করা অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিনশেড হলও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রুয়েটে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ১৪ সিরিজের ব্যাচ থেকে পরবর্তী বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ এই দুই শিক্ষাবর্ষের এক হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় দেড়শ জন ৩৩ ক্রেডিট অর্জন করতে পারেনি। ফলে গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামে ১৪ ও ১৫ সিরিজের শিক্ষার্থীরা।
তাদের অন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে রুয়েট কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার আন্দোলনরত দুই সিরিজের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা এবং টিনশেড হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে শিক্ষার্থীরা হলে ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসে অবস্থান করে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রুয়েট ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সিরিঞ্জের মাধ্যমে নিজেদের শরীরের রক্ত নিয়ে সেই রক্ত দিয়ে প্রশাসন ভবনের প্রবেশ মুখে নিজেদের দাবি লিখে রাখে। শনিবার দুপুরে সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে উপাচার্য তাঁর কার্যালয়ে বৈঠক করছেন, এমন খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় অবস্থান নেয়। তারা ঘোষণা দেয়, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা সেখান থেকে সরে যাবে না। ফলে শনিবার দুপুর আড়াইটার পর থেকে উপাচার্যসহ ২৫ জন শিক্ষক সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানের কারণে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকরা শনিবার রাতে উপাচার্যের কার্যালয়ে চেয়ারে বসে নির্ঘুম রাত কাটান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকেন উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগ।
সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া একাডেমিক কাউন্সিলের সভা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বৈঠক শেষে দুপুর সোয়া ১টার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ইকবাল মতিন সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে নেওয়া ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানান।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বৈঠকের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে দেওয়ার দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। তারা বৈঠকের সিদ্ধান্ত লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ের বারান্দায় অবস্থানের ঘোষণা দেয়। এ সময় আরএমপির দুজন সহকারী কমিশনার ও মতিহার থানার ওসির অনুরোধে উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বেগ তাঁর দপ্তরের সামনে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩৩ ক্রেডিট পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। এরপরও শিক্ষার্থীরা লিখিত সিদ্ধান্ত ছাড়া আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
উপাচার্যের ঘোষণার পর পরই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ডাবলু সরকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতারা উপাচার্য রফিকুল আলম বেগকে সঙ্গে নিয়ে নিচে নেমে আন্দোলনকারীদের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা টানা ২৩ ঘণ্টা উপাচার্য ও শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখায় সম্মিলিতভাবে হাতজোড় করে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চায়।