মোদির সঙ্গে বিএনপির যা আলাপ হলো
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ছয়জন শীর্ষ স্থানীয় নেতা। আজ রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন। দুটি পর্বে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
প্রথম পর্বের বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
এই বৈঠক শেষে প্রায় ১৫ মিনিট নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়া একান্তে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ভারতের কিংবা বিএনপির অন্য কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে তা কেবল বাংলাদেশ নয়, তা সমগ্র অঞ্চলের জন্য অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান অনেক শক্তিশালী। আর আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই। এ বিষয়গুলোই আমাদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে।’urgentPhoto
মঈন খান বলেন, ‘আমরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করেছি। কথা হয়েছে সার্কের পরিমণ্ডলে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন নিয়ে।’
‘আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। আমি কেবল নিজের পরিমণ্ডলে শান্তশিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ সমস্যা সৃষ্টি করবে না, তা হতে পারে না। আজকে বিরোধী দলের ওপরে অত্যাচার, মহাসচিব থেকে শুরু করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে, তৃণমূল পর্যায়ে হাজার হাজার কর্মীর ওপর যেভাবে অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে, এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় আপনা-আপনি উঠে এসেছে,’ যোগ করেন ড. মঈন।
গণতন্ত্রের বিষয়টি আবারও তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভারতে যেভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল পর্যায় থেকে আজকে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা সম্ভব হয়েছে কেবল গণতন্ত্রের কারণে। এটা স্পষ্ট, আজ (শুধু) দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারা পৃথিবীতে গণতন্ত্র ব্যতিরেকে কোনো মানুষের কল্যাণ হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘এ জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে তা অর্থহীন যদি এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকে।’
মঈন খান বলেন, ‘এখানে আমাদের দেশের যুব, নারী ও শিশু কল্যাণের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, ‘আপনাদের উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলতে চাই, যুক্তিসঙ্গত হবে এ প্রশ্নটি ভারত সরকার যখন সংবাদ সম্মেলন করবেন, তখন আপনারা তাঁদের কাছে জিজ্ঞাসা করবেন। এটা যুক্তিসঙ্গত নয় যে, তাঁরা কী বলেছেন তা আমরা বলব। যা আলোচনা হয়েছে তা এরই মধ্যে আপনাদের কাছে আমি তুলে ধরেছি।’ তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়ার বৈঠকটি কোনো দাবিদাওয়ার বিষয় নয়।’
মঈন খান বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী বড় দেশে যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী, যে ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আমরা বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে পারিনি, যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সরকারের কথায় চলে, যেখানে বাংলাদেশের প্রশাসন সরকারের কথায় চলে, যে দেশের পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের ওপর হয়রানি করে, যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু দলীয় ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সে দেশে গণতন্ত্র নেই। তা আজকের আলোচনায় উঠে এসেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কেবল ভৌত অবকাঠামো নয়, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
অনেক কিছুতে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে জানিয়ে মঈন খান বলেন, ‘আমরা আয়তনে ভারতের চেয়ে ছোট হতে পারি। কিন্তু যে কথাটি আমরা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি, আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক নির্দেশক যদি ভারতের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে আমরা দেখব ভারতের চেয়ে অনেক ওপরে অবস্থান করছি। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় গণতন্ত্র। সে ক্ষেত্রে আমরা ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছি। এ দেশে কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ সরকারের কাছ থেকে পাইনি।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ১৮ দলীয় জোট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিরোধী দলের মর্যাদাও হারায় বিএনপি।
এক বছর পর একই দাবিতে গত জানুয়ারি মাস থেকে টানা ৯৩ দিন অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।