সাত খুন : র্যাবের সৈনিকের আত্মসমর্পণ
সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বরখাস্ত হওয়া সৈনিক আবদুল আলীম নারায়ণগঞ্জের আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
আজ রোববার সকালে জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে আলীম হাজির হন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ১৬ জানুয়ারি একই আদালত সাত খুন মামলায় ২৬ জনকে ফাঁসি ও নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে সৈনিক আবদুল আলীমসহ চারজন পলাতক ছিলেন। ৫ ফেব্রুয়ারি র্যাবের আরেক সদস্য ফাঁসির আসামি এনামুল কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনসহ পলাতক আসামির সংখ্যা দাঁড়াল ১০ জনে।
জেলার সহকারী সরকারি কৌঁসুলি রিয়াজুর রহমান তালুকদার জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আত্মসমর্পণকারী আসামি আবদুল আলীম র্যাব-১১-তে বরখাস্ত হওয়া মেজর আরিফ হোসেনের অধীনে কর্মরত ছিলেন। আলীমের বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া থানার মহজমপুর গ্রামে। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন তিনি।
পলাতক আসামিরা হলেন—প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম ও শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামাল উদ্দিন, র্যাবের করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সি, আল আমিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন ও কনস্টেবল হাবিবুর রহমান।
সাত খুন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন—মূল আসামি নূর হোসেন, সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা, র্যাব সদস্য উপপরিদর্শক (এসআই) পুর্ণেন্দু বালা, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বজলুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ, হাবিলদার এমদাদুল হক ও নাসির উদ্দিন, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন ও বাবুল হাসান, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন, সিপাহি আবু তৈয়ব, নুরুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান নূর এবং নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৩৫ আসামির মধ্যে ২১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় মোট ১০৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে, তাঁর গাড়িচালক মিজানুর রহমান দীপু জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আলাদা দুটি মামলা করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।