দাদিশাশুড়ির কুলখানিতে গিয়ে শোকের খবর হলো পরিবার
ঢাকায় রিকশা চালান কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের হাসান (৩৫)। থাকেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।
গত শুক্রবার দাদিশাশুড়ি এংরেজ বানু বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। আজ রোববার তাঁর কুলখানি। দাদিশাশুড়ির সেই দোয়ায় অংশ নিতে স্ত্রী হালেমা বেগম (২৬), শ্যালিকা ঝুমা বেগম (১৫) ও একমাত্র ছেলেসন্তান ঈশানকে (৮) নিয়ে অন্য আরো তিন পরিবারের সঙ্গে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান।
নিহত হাসানের শ্যালক বাসির এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘একটি শোক (দাদির মৃত্যু) কাটিয়ে না ওঠার আগেই আরো বড় একটি শোক জাপটে ধরল। এক কবরের পাশে আমাদের এখন আরো চার কবর খুঁড়তে হবে।’
বাসিরের চাচাতো ভাই আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরা অপেক্ষায় ছিলাম ওদের জন্য। আরো আত্মীয়স্বজন আসবে। আজ দাদির জন্য খতম পড়ানো হবে। কিন্তু সব তছনছ হয়ে গেল। এখন আবারও দাফন-কাফনে ব্যস্ত হতে হবে।’
আজ সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রীবাহী ও মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটিতে থাকা কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর এলাকার চারটি পরিবারের ১১ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এর মধ্যে হাসানের পরিবারের চারজন। অন্য নিহতরা হলেন—নাজমুল (৩৫), সাধনা বেগম (৪০), হিরা মিয়া (৩৭), মানিক মিয়া (৩৮), মানিকের স্ত্রী মফিয়া খাতুন (২৫), মানিকের ছেলে অন্তর আলম (১২) ও নজমুল (৩৪)। এ সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ বাস ও মাইক্রোবাসের যাত্রী।
আহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসের যাত্রী শারমিন (২৭), পরে তাঁর শিশুসন্তান (এক বছর) রাব্বি, বাসের যাত্রী ভৈরবের চণ্ডীবের এলাকার সিরাজ মিয়া (৪০) ও কাওসার মিয়াকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে ঢাকা মেডিকেলে শারমিন মারা যান।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, সকাল সোয়া ৭টার দিকে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী অগ্রদূত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ও ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের নিকলী অভিমুখী একটি যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ১১ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত হন অপর দুই যাত্রী। এ সময় বাসের আট যাত্রী আহত হন।
খবর পেয়ে ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং নরসিংদী ও ভৈরব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালান। এ সময় লাশ উদ্ধার করে ভৈরব হাইওয়ে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলোর কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
ভৈরব হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। তবে তাদের গ্রেপ্তারের হাইওয়ে পুলিশের দুটি দল মাঠে কাজ করছে।