সানির বিরুদ্ধে ২ মামলায় এজাহারে কোনো মিল নেই
ক্রিকেটার আরাফাত সানির বিরুদ্ধে দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা দুটি মামলার একটি এজাহারের সঙ্গে অপরটির কোনো মিল নেই বলে আদালতে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী।
প্রথম মামলায় বলা হয়েছে, বাদী নাসরীনের সঙ্গে আরাফাত সানির গোপনে বিয়ে হয়েছে এবং বিয়ের বিষয়টি পরিবারের আর কেউ জানে না। আবার দ্বিতীয় মামলাতেই বলা হয়েছে, রাজধানীর একটি রেস্টুরেস্টে তাদের বিয়ে হয়েছে এবং নাসরিনের বাবা ও বোন সেই বিয়ের কাবিননামায় সাক্ষী হয়েছেন। গোপনেই যদি হবে তাহলে বাবা আর বোন সাক্ষী হলেন কী করে? দুটি মামলায় আরাফাত সানির বিরুদ্ধে বাদী দুই ধরনের তথ্য দিয়েছেন বলে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন সানির আইনজীবী।
ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের মামলায় আজ শনিবার সকালে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন।
অপরদিকে সানির আইনজীবী তাঁর জামিন আবেদন করে শুনানিতে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন। বাদী নাসরিনের পক্ষে আজ আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। নাসরিন নিজেও আদালতে ছিলেন না।
সানিকে আজো সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে আদালতের কাঠগড়ায় রাখা হয়। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) হরলাল মল্লিক প্রথমে সানিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক সরাফুজ্জামান আনসারীর সানির গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করে রিমান্ড শুনানির জন্য নির্দেশ দেন।
রিমান্ড শুনানির সময় জিআরও আদালতে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ও রহস্য উৎঘাটনের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
এর পরই সানির আইনজীবী এম জুয়েলে আহম্মেদ শুনানিতে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার আসামি আরাফাত সানির পক্ষে রিমান্ড নাকচ করে জামিন চাচ্ছি। আসামির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। বাদী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় প্রথম যে মামলা করেছেন, সেখানে তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে আরাফাত সানির গোপনে বিয়ে হয়েছে। সানি বাদী নাসরীনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি এবং ঘরে তুলে নেননি। কিন্তু নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে করা দ্বিতীয় মামলায় বলা হয়েছে, তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একসঙ্গে দীর্ঘদিন একটি বাসায় ভাড়া ছিলেন। একটি মামলায় বলেছেন, স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। আবার অপর মামলায় বলছেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করেছেন। দুটি মামলার কথা সাংঘর্ষিক।
‘মাননীয় আদালত, বাদী প্রথম মামলায় বলেছেন, তাদের গোপনে বিয়ে হয়েছে। আবার দ্বিতীয় মামলায় বলেছেন, তাদের বিয়ে হয়েছে মিরপুর-১ এর প্যারাডাইজ প্লাজার গ্র্যান্ড প্রিন্স হোটেলে। সেই বিয়ে সাক্ষী ছিলেন বাদীর বাবা ও বোন। তাহলে বিয়ের ব্যাপারে এখানে দুই মামলায় দুই ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে।’
আদালতে সানির আইনজীবী আরো দাবি করেন, দ্বিতীয় মামলায় যৌতুক চাওয়ার ঘটনা দেখানো হয়েছে ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই। কিন্তু বাদী মামলা করলেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ। তাহলে এত দিন পরে কেন মামলা করলেন? ঘটনার এত দিন পরে মামলার কারণও বোধগম্য নয়। এর মানে বুঝাই যায়, মিথ্য ঘটনা দিয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এরই মধ্যে পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে এসেছে যে, কাবিননামাটি সৃজন করা হয়েছে।
শুনানি শেষে সানির আইনজীবী এম জুয়েল আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সানির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলার জামিন শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত রয়েছে। এ ছাড়া সানি এখন দুই মামলায় কারাগারে আটক রইলেন। আমরা অতি শিগগিরিই সানির জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করব।
নথি থেকে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৪ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুকের জন্য মারধরের অভিযোগে ক্রিকেটার আরাফাত সানি ও মা নার্গিস আক্তারের বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলা করেন নাসরিন সুলতানা। ওই দিন বিচারক মামলাটিকে এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য মোহাম্মদপুর থানাকে নির্দেশ দেন।
এর আগে ২২ জানুয়ারি রাজধানীর আমিনবাজার এলাকা থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা প্রথম মামলায় আরাফাত সানিকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাঁকে পরে ঢাকার মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই একদিনের রিমান্ডে পাঠান।
মামলার নথিকে দাবি করা হয়, ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ক্রিকেটার আরাফাত সানির সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে নাসরিন সুলতানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাঁরা দুজন ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার শুরু করেন। সংসার চলার ছয় মাস পর ক্রিকেটার আরাফাত সানি তাঁর মায়ের পরামর্শে নাসরিনের কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকার জন্য সানি তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন এবং গালিগালাজ করে ভাড়া বাসায় ফেলে যান।
নথিতে আরো উল্লেখ করা যায়, ২০১৬ সালের ১২ জুন বাদী নাসরিন সুলতানা ভাড়া বাসাসহ যাবতীয় ভরণপোষণ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে সংসার করতে স্বামী সানির সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় সানি যৌতুকের ২০ লাখ টাকা দাবি করে নাসরিনকে বলেন, ‘যৌতুকের টাকা না দিলে আমার মা তোমার সঙ্গে সংসার করতে দেবেন না এবং এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমার পরিণতি অনেক খারাপ হবে। কারণ তোমার কিছু অশ্লীল ছবি আমার মোবাইল ফোনে রয়েছে।’ এর পর বাদীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সানির মা তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর সঙ্গে আমার ছেলে সংসার করবে না। তাই সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যবস্থা কর।’ এর পর বাদী তাঁর বাসায় চলে যান।