সম্পূরক বাজেট নিয়ে ক্ষুব্ধ সুরঞ্জিত
২০১৪-১৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রীদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান সাবেক এই রেলমন্ত্রী।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের কী মনে করছেন এই পার্লামেন্টে? হোয়াট ইজ থিং? তারপর কী লিখছেন, দুইটি চলমান প্রকল্প। কোথাকার প্রকল্প? কী নাম তাদের? বাড়ি কোথায়? কোথা থেকে আইছে? আকাশ না বাতাস? দয়া কইরা বলেন। না, বলবেন না। উন্নয়ন সহায়তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষ প্রয়োজনটা কী? হোয়াট ইজ দ্যা বিশেষ? অনারেবল মিনিস্টার? কাইন্ডলি এক্সপ্লেইন ইট। দেয়ার আর থি হানড্রেড মেম্বারস। দে আর পাবলিক রিপ্রেজেন্টিটিভ। পরিকল্পনাতে যদি এটা হয়? পরিকল্পনাতে অবশ্যই টাকা যাবে। যদি আমাদের সামর্থ্য থাকে পরিকল্পনায় আমরা আরো চার ডবল টাকা দিতে চাই। পরিকল্পনায় টাকা দেব না তো দেব কোথায়? কিন্তু আপনি সম্পূরক বাজেট করে নেবেন আমাকে বলবেন না? পার্লামেন্টকে আপনি আন্ডারগ্রাউন্ড করবেন। পার্লামেন্টকে আপনি বাইপাস করবেন।’
সাবেক রেলমন্ত্রী বলেন, ৩২টি মন্ত্রণালয় ২৩ হাজার ৫০ কোটি টাকা খরচই করতে পারে নাই। এই সৌভাগ্যবান মন্ত্রীরা কারা? এক টাকাও খরচ করতে পারেন নাই। হাতই দিতে পারেন নাই। হাতই যদি দিতে না পারেন একা প্রধানমন্ত্রী কী করবেন? সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে আপনি আমার ভোট নিবেন তো? এইটা তো এই পার্লামেন্টে ভোট ছাড়া পাস হবে না? আমি কিসে ভোট দিব? ভোট দিতে গেলে আপনাকে বলতে হবে এই এই মন্ত্রী, এই এই মন্ত্রণালয় এই টাকাটা খরচা করতে পারে নাই। কেন পারে নাই, এই কথাটাও আপনাকে বলতে হবে। এই কথাটাই আপনার আর্টিক্যাল ৯১-এ বলেছে। যারা বেশি খরচা করেছে আমি তাদের সম্বন্ধে পরে আসছি। রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার হিস্ট্রি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ২২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রপতি ভবনের ইতিহাস রাখতে হবে ভালো কথা। রাখেন। এইটা যে একেবারে সাপ্লিমেন্টারি বাজেট কইরে করতে হবে, হোয়াট ইজ দ্য আর্জেন্সি? এইটা তো সাপ্লিমেন্টারি বাজেট হবে পৃথিবীর কোথাও নাই।
প্রবীণ এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সাপ্লিমেন্টারি বাজেট রাখা হয় এই কারণে যে, আমার একটা প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে, আমার কিছু টাকা প্রয়োজন আমি খরচা করব ওই সময়। কিন্তু যেটার আর্জেন্সি নাই, যেটা কালকেও করা যেতে পারে। এইবারের বাজেটে করেন, কোনো অসুবিধা তো নাই। এই কুদরতি কারবার দিয়ে তো চলবে না। পরিকল্পনা বিভাগ। পরিকল্পনা বিভাগকে আমার অনেক টাকা দিতে হয়েছে। ব্যাখ্যামূলক স্মারক লেখছেন- একটি নতুন প্রকল্প বৃদ্ধি পাওয়ায়, দুটি প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ও উন্নয়ন সহযোগিতা খাতে এই অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। এটার কোনো মানে হইল? একটি শব্দেরও কোনো অর্থ নেই। এই যে বললেন, একটি নতুন প্রকল্প, কিসের নতুন প্রকল্প? প্রকল্পটার নাম কী? কোথাকার প্রকল্প? এটা বলবেন তো যে, এই প্রকল্প। কয় টাকার প্রকল্প? নাথিং।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘ভোট করতে গেলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীকে অবশ্যই দে উইল মেক টু অ্যাকাউন্টিবিলিটি অব দিজ পার্লামেন্ট। কারণ অ্যাকাউন্টিবিলিটি অব দ্য ক্যাবিনেট অ্যান্ড পার্লামেন্ট ইজ কালেকটিভ। খালি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিলে সব হবে না। সুতরাং আপনি কে? কেন? ক তটাকা খরচা করছেন? কীভাবে করছেন?
সাবেক রেলমন্ত্রী বলেন, ‘আর যদি আপনি মনেই করেন যা খুশি লেইখা নিয়া যাও আর কাউরে কিছু বলার দরকার নাই তাহলে দয়া কইরা এই সম্পূরক বাজেট বই ছাপানোর দরকার নাই। টাকা যাক, আমাদের আরো বেশি টাকা দিতে কোনো বাধা নাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কী? অবসর ভাতা। অবসর ভাতার সম্পূরক বাজেট লাগে? আপনি জানেন না কত কর্মচারী আগামী বছর অবসরে যাবে? তারে কত টাকা দিতে হবে? এটা তো মেইন বাজেটেই থাকে। আর কিসের জন্য? আনুষঙ্গিক ভাতাদি। ভাতা, আপনি জানেন না? এটা তো মেইন বাজেটেই থাকে। আর কী? মেরামত। থানা মেরামত করতে হয়, গাড়ি মেরামত করতে হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়ি মেরামত কেন? আমরা তো নতুন গাড়ি কিনে দিতে চাই। আমরা খুশি হইতাম যদি দেখতাম আজকে ১০ হাজার নতুন পুলিশ নিয়োগ করার জন্য আমার আরো আট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অবশ্যই এই পার্লামেন্ট অত্যন্ত উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আপনাকে এই টাকা দিত। এটাই তো আমরা চাই। আমরা চাই ইফিশিয়েন্ট পুলিশ। ইফিশিয়েন্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা এ যাবৎ যা করছে তাতে আমরা খুশি। আরো বেশি বাজেট বরাদ্দ দিতে চাই। বলতে হবে যে ওই কারণে বাড়ছে।’
প্রবীণ এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আপনি যে সম্পূরক বাজেট নিয়ে এসেছেন, আমাকে ভোট দিতে বলেন। আমি যে ভোট দিব, কোথায় দিব? আপনি যে খরচ করলেন কোথায় করলেন? অন্যান্য দেশে ইংল্যান্ডেও খরচ করলে বলতে হয়। আপনি ইচ্ছা করলে পাবলিকলিও দিতে পারেন। সংসদীয় কমিটিকেও দিতে পারেন। তারপর আপনি আসেন যে এই টাকাটা খরচ করছেন, আপনারা ভোট দেন। আমি কোথায় ভোট দেব? আমি যে টাকা অথরাইজড করি নাই সে টাকা আপনি খরচ করে ফেলছেন। আরেকটা জিনিস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আছেন। আপনি এই সংস্কারটিও করেন। সম্পূরক বাজেট কমিটিতে দেওয়ার বিধান নাই। বাজেট ফিন্যান্সিয়াল কমিটিকে দেওয়া দরকার। সম্পূরক বাজেট হওয়ার আগে আমাদের ফিন্যান্সিয়াল কমিটিতে দিলে এই প্রশ্ন থাকে না। সংবিধানের আর্টিক্যাল-৯৭-এ বলা আছে, এই সম্পূরক বাজেট কীভাবে হবে। কোথায়? কেন? এটা স্পেসিফিকলি বলে দিতে হবে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘এক মন্ত্রীকে বললাম। কয়, আগেও এমন লেখা ছিল। আগে তো আমাদের বাবারা জুতা পরত না, তাহলে কি আমরা জুতা পরা বাদ দিব? খালি গায়ে চলত, আমরা কি খালি গায়ে চলব? এই যে নতুন জিনিসগুলো উল্লেখ করলে ভালো হয়। টাকা যে বাড়াইছেন এর সমালোচনা করছি না। কোথায় বাড়াইছেন? কেন বাড়াইছেন? কার জন্য বাড়াইছেন? সেটা উল্লেখ করতে বলছি।’
সুরঞ্জিত বলেন, ‘ব্যাংকে বরাদ্দ দিছেন ভালো কথা। কিন্তু ব্যাংকের অবস্থাটা কী? আপনি বেসিক ব্যাংকের অবস্থান ভাইঙ্গা পড়ছে। এক্সিম ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক আমার শেয়ার বাজার থেকে এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়া গেল। অর্থমন্ত্রী আপনি দয়া কইরা এদের বিরুদ্ধে যদি একটা তদন্ত করাইতেন তাহলেও আমরা অন্তত খুশি হইতাম। ব্যাংকিং খাতে দিন দিন অবনতি ঘটবে আর আপনি টাকা নিবেন। আপনি কন কত টাকা কী কী খাতে ঋণ দিছেন। এই টাকা কিভাবে আদায় হবে। কন, আবার নেন, তাতে আপত্তি নাই। এই ব্যাংকিং খাতে যে অবস্থা আমাদের ভালো মনে হচ্ছে না।