আতিয়া মহলের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির ‘জঙ্গি আস্তানা’ আতিয়া মহলের আশপাশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
আজ রোববার সকাল ৭টার দিকে এই ধারা জারি করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের গোয়ালাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ফজল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
ওসি খাইরুল জানান, সকাল ৭টার দিকে আতিয়া মহলের আশপাশে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ওই এলাকার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। এ ছাড়া একসঙ্গে তিনজনের বেশি লোকজন চলাচল করা যাবে না।
১৪৪ ধারা জারি করার পর বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
এদিকে, সিলেটে জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জন। নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় এক শিক্ষার্থীসহ আরো চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন পুলিশ ও দুজন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুই সদস্য রয়েছেন।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জান্নাতুল ফাহিম মারা গেছেন। তাঁরা দুজনই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ কায়সার, স্থানীয় যুবক ওয়াহিদুল ইসলাম অপু (২৪) ও শহীদুল (৩০)। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
হাসপাতালে ভর্তি করার পর আহত অজ্ঞাতপরিচয় একজন রাতে মারা যান বলে সিলেট পুলিশের উপকমিশনার রেজাউল করিম জানান।
আবদুল্লাহ আল সোহাগ নামের এক যুবক জানান, নিহত অপু তাঁর ফুফাতো ভাই। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালুপাড়া চান্দিঘাট এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আওলাদ হোসেন। অপু সিলেট মদন মোহন কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
এ ছাড়া নিহত শহীদুলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় বলে জানা গেছে। তিনি সিলেটের দারিয়াপাড়ায় থাকতেন।
হাসপাতালে এনটিভি প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ বোমা বিস্ফোরণে আহত অন্তত ১৫ জনকে ভর্তি হতে দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে আতিয়া মহল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মূল সড়কের কাছের একটি জায়গায় প্রথম বোমার বিস্ফোরণটি ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসেন।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কাছাকাছি স্থানে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা জানান, যেখানে প্রথম বোমার বিস্ফোরণটি ঘটে, তার কাছেই সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে অভিযান সম্পর্কে ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল কয়েকটি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে দলটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শিববাড়ি এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীদের ওই এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স, সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও কর্মীরা রয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে সেনাবাহিনীর আট সদস্যের একটি প্যারা কমান্ডো দল ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এর আগে অভিযানে অংশ নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে আতিয়া মহল ঘিরে রাখে পুলিশ। বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে ধারণা পুলিশের।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বাড়িটির দোতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ২৯টি ইউনিটে ২৯টি পরিবার রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রামের অভিযানের পর আটক জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিববাড়ি এলাকার পাঁচতলা বাড়িটি ঘিরে রাখেন সিলেটের স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ঢাকা থেকে যাওয়া কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা।