জঙ্গি কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়ার উদ্বেগ, সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন
সিলেটের শিববাড়িতে সফলভাবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোসহ ‘দেশরক্ষা বাহিনী’কে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
আজ মঙ্গলবার রাতে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে খালেদা জিয়া এ কথা জানান। তিনি সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ধর্মীয় জঙ্গিবাদের নামে পরিচালিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত বলে জানান।
বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সিলেটে একটি আবাসিক ভবনে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গোপনে অবস্থানকৃত সন্ত্রাসীদের দমনের লক্ষ্যে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য আমি আমাদের সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোবৃন্দসহ দেশরক্ষা বাহিনীর প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিযানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এবং যেসব সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন, তাদের প্রতি জ্ঞাপন করছি শোক ও সহানুভূতি।’
গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি, বেকারত্বই কারণ
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাদেরকে মনে রাখতে হবে কেবলমাত্র দমন অভিযান চালিয়ে সমাজ থেকে জঙ্গিবাদের শেকড় পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। দুই-একটি দমন অভিযানের সাফল্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করারও কোনো সুযোগ নেই। মুসলিমপ্রধান এই দেশটিতে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতাহীন শাসন, দুর্নীতি, সুবিচারের অভাব এবং যুব সমাজের বেকারত্বই জঙ্গিবাদ বিস্তারের প্রধান কারণ। এ কারণগুলো দূর করতে হবে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা নিতে হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হতে হবে। সেই আহ্বান আমি বরাবর জানিয়ে আসছি। দুঃখের বিষয় আমাদের আহ্বান এখন পর্যন্ত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছে।’
‘দমন অভিযান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও সংশয়’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমানে স্পর্শকাতর একটি সময়ে জঙ্গিবাদের আকস্মিক বিস্তার এবং দমন অভিযানে স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সন্দেহ দূর করতে হবে। আমি এই বিষয়গুলো অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও খুবই স্পষ্ট। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশব্যাপী এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের সরকারও জঙ্গিবাদের এই সংকটের মুখোমুখি হয়। আমরা কঠোর হাতে তা দমন করি। জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হয় এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার সম্পন্ন করা হয়। পরে তাদের শাস্তি কার্যকর করা হয়।’
‘সরকার বা দলের নয়, জাতীয় সমস্যা’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জঙ্গিবাদ এভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা এ প্রশ্ন কখনো তুলিনি এবং এ নিয়ে দোষারোপের রাজনীতিতেও লিপ্ত হইনি। বিশেষ কোনো সরকার বা দলের নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। তাই দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য আমি ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সবাইকে আমি এ সমস্যা নিরসনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করছি।’
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিটিতে সই করেছেন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।