পুলিশের ভয়ে এমপি লিটন হত্যায় জবানবন্দি দেন কাদের খান!
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডা. আবদুল কাদের খান আদালতে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
আজ বুধবার জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি কাদের খান এই আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মইনুল হাসান ইউসুব তাঁর আবেদনটি গ্রহণ করে নথিভুক্ত করেন।
পরে কাদের খানের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানের পক্ষে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার বিধান মতে তিনি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন তিনি সেই জবানবন্দি স্বেচ্ছায় প্রদান করেন নাই। পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের চাপে এবং ভয়ে এবং তাদের শেখানো মতে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সেই মর্মে তিনি বিজ্ঞ আদালতে তাঁর প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের নিমিত্তে আজকে বিজ্ঞ আদালতে দরখাস্ত করেছেন। বিজ্ঞ আদালত তাঁর সেই দরখাস্ত গ্রহণ করে নথিভুক্ত করেছেন।’
আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, একই সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খান জেল কর্তৃপক্ষের কাছে ডিভিশন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। সেটা আজ আদালতে দাখিল করেছেন। আদালতে ফরওয়ার্ড হয়ে সেটা জেলখানায় যাবে।
এমপি কাদের খানের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার ব্যাপারে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ (মাস্টারপাড়া) এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে ১ জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
ওই হত্যা মামলায় আবদুল হান্নান, মেহেদী হাসান ও শাহীন মিয়া নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁরা এমপি লিটনকে হত্যার কথা স্বীকার করে গাইবান্ধার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বগুড়ার বাসা থেকে আবদুল কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে গাইবান্ধার পুলিশ। পরদিন তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একই দিন আনোয়ারুল ইসলাম রানা নামের একজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
কাদের খানকে গ্রেপ্তারের পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক। ডিআইজি দাবি করেন, ক্ষমতার উচ্চাভিলাষী লোভ এবং আবার সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার জন্য এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। এক বছর ধরে হত্যার পরিকল্পনা করেন সাবেক এমপি আবদুল কাদের খান। তাঁর অর্থায়নে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। এমনকি খুনিদের নানা ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করে তাঁদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কাদের খান।
ডিআইজি জানান, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে আবদুল হান্নান, মেহেদী হাসান, শাহীন ও রানা অংশ নেয়। এঁদের তিনজন সরাসরি হত্যা করেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর কাদের খানকে পরে আরো দুই দফায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম গত ৭ মার্চ সাংবাদিকদের জানান, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে তিনটি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কাদের খান একটি অস্ত্র স্বেচ্ছায় থানায় জমা দেন। এ ছাড়া তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরো একটি অস্ত্র তাঁর গ্রামের বাড়ির উঠানের গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় কাদের খানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়।