মর্জিনাকে শনাক্ত করতে পারেনি পরিবার, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ
সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় নিহত নারী কথিত মর্জিনাকে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম। আজ বুধবার বিকেলে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) সদরদপ্তরে বাড়ি ভাড়ার সময় দেওয়া ছবি ও মৃতদেহের ছবি দেখালে তাঁরা তা শনাক্ত করতে পারেননি।
মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ফজল এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, জঙ্গি মুসার পরিবার রাজশাহী থেকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
এর আগে সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে পরিচালিত জঙ্গি অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’-এ নিহত এক নারী জঙ্গির সঠিক পরিচয় বের করতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন থেকে নিয়ে আসা হয় বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হককে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পরিচালিত অভিযানে নিহত জঙ্গি জুবাইরা ইয়াসমিনের বোন মনজিয়ারা পারভিনই সিলেটে নিহত পুলিশের ধারণাকৃত জঙ্গি সদস্য মর্জিনা কি না তা নিশ্চিত করতে জুবাইরা ও মনজিয়ারার বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হক বিকেলে বান্দরবান থেকে সিলেটে এসে পৌঁছান। তাদের নিহত নারী জঙ্গির মৃতদেহের ছবি ও বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় দেওয়া পরিচয়পত্রের ছবি দেখানো হয়। তবে তাদের মর্গে মৃতদেহ দেখানো হয়নি। ছবি দেখে নিহত নারী জঙ্গিকে মনজিয়ারা হিসেবে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা। তারপর নুরুল ইসলাম ও জিয়াবুল হকের ডিএনএ নমুনা রাখা হয় যার সঙ্গে নিহত জঙ্গির ডিএনএ ক্রস ম্যাচ করে পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
নুরুল ইসলামের মেয়ে জুবাইরা সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। নুরুল ইসলামের আরেক মেয়ে মনজিয়ারাও নিখোঁজ আছেন। এ পরিবারের আরেক সদস্য জহিরুল হক জসিমকেও জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই ভবনে অপারেশন পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী গত সোমবার এক নারী ও এক পুরুষ জঙ্গির লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তখন পুলিশের পক্ষে থেকে বলা হয়, ওই নারী জঙ্গিই মর্জিনা হতে পারেন। মঙ্গলবার ওই দুই জঙ্গির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং তাদের ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা জানান, ওই দুই জঙ্গির মৃতদেহ থেকে সংগৃহীত ডিএনএ, ভিসেরা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ঢাকায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এর সঙ্গে মনজিয়ারার পরিবারের সদস্যদের সংগৃহীত ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্রে জানা যায়, মনজিয়ারা বেগমের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩ এপ্রিল। তাঁর বাবার নাম নুরুল আমিন, মায়ের নাম সাবেকুর নাহার। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ২৭৮ নম্বর বাইশারী মৌজার অংশ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এদিকে শিববাড়ি এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আতিয়া মহলে রয়ে যাওয়া অপর দুই জঙ্গির মৃতদেহ এখনো ভবনের মধ্যেই রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান শেষ হওয়ার পর পুলিশের কাছে আতিয়া মহলের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।
এরপর ঢাকায় বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। বুধবার এ ইউনিটের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বোম ডিসপোজাল ইউনিট পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে মোগলাবাজার থানার ওসি খাইরুল ফজল।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার বাসুদেব বণিক জানান, পুলিশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। তবে ভেতরে প্রচুর বোমা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট আগে সব বোমা বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করবে। তারপর পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।