হারের কারণ খুঁজছে আ.লীগ, কোন্দল হলে ব্যবস্থা
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধার কমতি নেই কিন্তু দলীয় কোন্দলই যদি পরাজয়ের অন্যতম কারণ হয়, তবে অভিযোগ প্রমাণ হওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা দেশের বহিষ্কার কার্যক্রমের বিষয়টি কুমিল্লা থেকেই শুরু হতে পারে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা কুমিল্লা নির্বাচন নিয়ে এভাবেই মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে নেতারা মনে করেন, এই পরাজয় তাদের কিছুটা হতাশ করলেও রাজনৈতিক পরিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু।
গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়ায় দলীয় কোন্দলের দিকেই নজর পড়ছে বেশি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানার বাবা আফজল খান ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের পুরোনো দ্বন্দ্ব আবারও সামনে চলে এসেছে।
দলের নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করে বের করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কুমিল্লায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেননি বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শুক্রবার তিনি দুপুরে বলেছেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল নিরপেক্ষ, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা। জয়-পরাজয় বিষয় জনগণের। নারায়ণগঞ্জের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘এই নির্বাচনের পর আপনার (বিএনপি) যদি মনে করে থাকেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবেন, তাহলে প্রস্তুত হন, ভোটে নামুন, জনগণের আস্থা কার প্রতি আছে তা প্রমাণ হয়ে যাবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে জনগণ।’
দলটির অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পুনরায় জয় হয়েছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে হতে পারে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ভূমিকা রাখতে পারেন, তারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ কুমিল্লা নির্বাচন। সব নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন উপহার দিয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার প্রমাণ পেল। জনগণের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমরা পরাজিত হয়েও বিজয়ী হয়েছি মনে করি। কারণ বিএনপির অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ নতুন করে মিথ্যা প্রমাণিত হলো।’
এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা বলেছেন, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পরাজয় হয়েছে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা রাখতে হবে। দলের মধ্য থেকে ব্যক্তিস্বার্থে, ব্যক্তি লোভে কাজ করবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। স্থানীয় নির্বাচনে অনেক সময় গ্রুপিং, দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে, যেটা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পড়েছে। আমাদের দলের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এ নীতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা। দলটির নেতারা বলেছেন, যাঁরা দলের মধ্যে থেকে দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কাজ করেছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যারা দলের নিশ্চিত বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করে তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহ করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘দলের মধ্য থেকে ব্যক্তিস্বার্থে, ব্যক্তি লোভে কাজ করবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। স্থানীয় নির্বাচনে অনেক সময় গ্রুপিং, দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ে, যেটা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পড়েছে। আমাদের দলের মধ্যে কিছু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে এ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কুমিল্লার বিষয়ে এরই মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বলেছি এ বিষয়ে তথ্য নিয়ে আসতে। এরপর আমরা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেব।’
অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থী পরাজয়ের কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে, আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো মূল্যায়ন করতে পারি নাই। তবে নিশ্চয়ই ব্যাপারটি আমরা খতিয়ে দেখব। নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে কারণগুলো কী কী? দলের কোন নেতাকর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করে থাকে সেগুলো খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই নীতি শুধু এখানে নয় সারা দেশের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এর আগে জেলা পরিষদ ও পৌর নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় স্বার্থে এখন থেকে হার্ডলাইনে নামবে আওয়ামী লীগ।