ঐশীর সঙ্গে বিচারকদের ‘এক্সক্লুসিভলি’ কথা
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তাঁদের মেয়ে ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে তাঁর সঙ্গে বিচারকরা ‘এক্সক্লুসিভলি’ কথা বলেছেন।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চে ঐশীকে হাজির করা হয়। এর পর তাঁকে এজলাসে ওঠানো হয়।
শুনানি শুরু হলে আদালত বলেন, একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এ রিট করা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐশী বংশগতভাবে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। এ দুটি বিষয় আদালতে আসার পর তাঁকে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাধারণত মামলার এ পর্যায়ে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। কিন্তু ঐশীর মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্যই তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।’
‘আমরা শুধু এক্সক্লুসিভলি তাঁর সঙ্গে কথা বলব। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন’, যোগ করেন আদালত।
এর পরই ঐশীকে এজলাস থেকে বিচারকের খাসকামরায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কথা বলার পর ১১টা ১০ মিনিটের দিকে তাঁকে পুনরায় জেলাখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন সকালে আদালতে ঐশীকে হাজির করার পর আইনজীবীসহ সাধারণ মানুষ তাঁকে দেখার জন্য বিচারকের কক্ষের সামনে ভিড় জমায়। পুলিশকে ভিড় সামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়।
গত ৩ এপ্রিল এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিকালে আদালত মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে ঐশী রহমানকে ১০ এপ্রিল হাজিরের কথা বলেন।
ওই দিন আদালত রায়ে বলেন, মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঐশী রহমান হত্যার সময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন এবং বংশগতভাবে তাঁরা মানসিক রোগী। তাঁর দাদি, চাচারা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। সেই মেডিকেল রিপোর্টের সত্যতা যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করতে তাঁকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হলো।
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম জহির আদালতের ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ঐশীকে হাজির করা ঠিক হবে না। মামলার এ পর্যায়ে তাঁকে হাজির করা হলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। কেননা মামলার সাক্ষ্য, তদন্ত সবকিছু শেষে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টে ঐশীকে হাজির করা হলে আদালতের মায়া জন্মাতে পারে বা ঐশীর পক্ষে যেতে পারে। তাই তাঁকে হাজির করা ঠিক হবে না।
ওই দিন ঐশীর পক্ষে আইনজীবী আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী শুনানি করেন।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর দুবার মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। প্রত্যেক মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।
একই সঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
মামলার অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।
ওই দিন বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ ঐশীর প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আর সে যে সাবালিকা, এটাও প্রমাণিত হয়েছে।’ আসামিপক্ষ ঐশীর বয়সের পক্ষে যা যুক্তি দিয়েছে, তা যথাযথ নয় বলে মন্তব্য করেন আদালত।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘ঘটনার দিন ঐশী নেশাগ্রস্ত ছিল। তার ক্রিমিনাল ইনটেন্ট (অপরাধ সংঘটনের ইচ্ছা) ছিল। হঠাৎ করেই কোনো উত্তেজনা ছিল না, পূর্বপরিকল্পিতভাবে সে তার বাবা-মাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে। সে সুকৌশলে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে।’
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরের দিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলার দিন বিকেলে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন ওই দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের। এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।