রাজনকে নর্দমার পানি খেতে দেওয়া হয়েছিল
সিলেটে শিশু রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া এক আসামির সাজা কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, আসামিরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দোষ স্বীকার করেই শিশু রাজন হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। এই মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম ছিলেন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা।
আদালত বলেন, শিশু রাজনের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দুদিন পরই কামরুল সৌদিতে পালিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় কামরুল রাজনের মা এবং বোনের বিষয়ে জঘন্য কথাবার্তা বলেছে। এমনকি রাজন পানি খেতে চাইলে তাকে ড্রেনের পানি দেওয়া হয়। পরে আবার পানি চাইলে তার শরীরের ঘাম চেটে খেতে বলা হয়।
আদালত আরো বলেন, ভিডিও ফুটেজ মামলার নথি হিসেবে নেওয়া যাবে না মর্মে আসামির আইনজীবীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা সে বিষয়ে কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাইনি। তাই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ মামলার নথি হিসেবে গ্রহণ করা হলো।
এরপর আদালত আসামিদের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে কামরুলসহ চারজনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখা হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি নূর মিয়ার সাজা কমিয়ে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর রাজন হত্যা মমালায় আসামি কামরুলসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ওই সময় একজনকে যাবজ্জীবন ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় তিনজনকে।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া চারজন হলেন- মামলার প্রধান আসামি সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন শেখপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলাম, পীরপুর গ্রামের সাদিক আহমদ ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার, শেখপাড়া গ্রামের তাজ উদ্দিন বাদল ও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে পাভেল। এর মধ্যে জাকির হোসেন ওরফে পাভেল বর্তমানে পলাতক।
আদালত জালালাবাদ থানাধীন পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নূর মিয়া ওরফে নূর আহমদকে যাবজ্জীবন, শেখপাড়া গ্রামের দুলাল আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। লাশ গুমের চেষ্টার দায়ে আসামি কামরুলের ভাই শেখপাড়া গ্রামের মুহিদুল ইসলাম মুহিত, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে সাত বছর করে এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও গ্রামের আয়াজ আলীকে এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আসামি শামীম আহমদ পলাতক।
বেকসুর খালাস পান জালালাবাদ থানাধীন হায়দরপুর গ্রামের রুহুল আমীন, কুমারগাঁও গ্রামের আজমত উল্লাহ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের ফিরোজ আলী।
গত ১২ মার্চ মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের করা আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। গত ৩০ জানুয়ারি রাজন হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর রাজন হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে। লাশ গুম করার সময় ধরা পড়ে একজন।
পরে পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করে। ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে নির্যাতনকারীরা।