উন্নয়নের প্রচারে নামছে আওয়ামী লীগ
দলীয় কোন্দল নিরসন, দলের উন্নয়ন প্রক্রিয়া জনগণের সামনে তুলে ধরা, কর্মী সংগ্রহের মধ্য দিয়ে দলকে নির্বাচনমুখী করার চূড়ান্ত অভিযানে নামছে আওয়ামী লীগ। সেই উদ্দেশে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ মে গণভবনে জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদকদের নিয়ে বসবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রচারপত্র-ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও সভা-সমাবেশে বক্তব্য প্রদান, জনগণের সামনে মহাজোট সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার নির্দেশ দেবেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
হানিফ বলেন, ‘২০ মে জেলার নেতাদের সঙ্গে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার মতবিনিময়ে তৃণমূল নেতাদের দিকনির্দেশনা দেবেন এবং তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করার কথা বলবেন। ওই দিনই সার্বিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও ১ জুন থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান হানিফ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ‘২০ মে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রথমে তিনি এলাকার সংকট ও সম্ভাবনার কথা শুনবেন। সে লক্ষ্যেই দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের দিকনির্দেশনা দেবেন।’
‘পাশাপাশি আমাদের গবেষণা সেল সিআরআই-এর গবেষণামূলক তথ্যচিত্র, স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র তুলে দেওয়া হবে। সে বৈঠকে আমাদের সভাপতির ডায়নামিক নির্দেশনায় জেলায় জেলায় নতুন উদ্যম শুরু হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ জানান, ওই দিন তৃণমূলের জনগণের সামনে প্রদর্শন করা নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, নির্বাচনী ইশতেহার ও বিএনপি-জামায়াতের নির্মম তাণ্ডবের ভিডিওচিত্র নেতাদের হাতে তুলে দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে দেওয়া হবে মহাজোট সরকারের বাস্তবায়িত ও প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্পের স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র।
কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনের কিছুদিন পর থেকেই কোন্দল নিরসনের কাজ শুরু হয়। সাংগঠনিক সফর ও তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে এর অবসানের চেষ্টা করা হয়। অতি সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকটি জেলার নেতাকর্মীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথা বলেন চুয়াডাঙ্গা ও কুমিল্লার নেতাকর্মীদের সঙ্গে। ২৪ এপ্রিল যশোর, ২৫ এপ্রিল সাতক্ষীরা, ২৭ এপ্রিল নীলফামারীর জেলার নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের আলাপ হয়। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করার উদ্দেশ্যে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২২ এপ্রিল, এটা চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এর পর বিরতি দিয়ে ৬ মে চট্টগ্রামে প্রতিনিধি সভা শুরু হবে।
ওই নেতা আরো জানান, দলীয় কোন্দল বিরাজমান এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, নেত্রকোনা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, বরিশাল মহানগর, ভোলা, পিরোজপুর, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জকে। এসব এলাকার সংকট ও সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ শেষে নানামুখী প্রচেষ্টায় অচিরেই নামছেন দলের নেতারা।
তৃণমূলের দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দলে কোন্দল নয়, মতানৈক্য আছে। অতীতেও ছিল। এটা সব দলেই থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ইতিহাস ভিন্ন। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ভিন্ন। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে দলটি পরিচালিত হয়।’
‘সময়ের প্রয়োজনে, দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে সকল মতানৈক্যের অবসান অতীতে হয়েছে। এবারও হবে। দল সেভাবেই এগোচ্ছে।’