ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে বসবাস
বান্দরবানের সাত উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালে বাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থায় আছে। চার দিনের টানা বৃষ্টিতে বেড়েছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে বান্দরবানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে মাইকিং করে নির্দেশ দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে আজ বৃহস্পতিবারও মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি মানুষ এলেও ঘরবাড়ি রেখে পাহাড়ের কোনো বাসিন্দা সেখানে আসছে না। গত দুই দিনে বান্দরবানে ৩০৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে বান্দরবান জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন মারা যায়।
বেঁচে থাকার তাগিদে সদর উপজেলার কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, কালাঘাটা, বালাঘাটা, বনরূপাপাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিণমারা, তেলুমিয়াপাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিমপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রূপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয়পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে হাজার হাজার পরিবার। এদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাজী মুজিবর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বান্দরবানে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজন সরিয়ে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ সরকারিভাবে এখনো নেওয়া হয়নি। বৃষ্টির সময় শুধু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনকে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এবং সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়।’
এতে প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন করে স্থায়ী সমাধানের পথে এগোতে হবে বলে মনে করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের এ সদস্য।
সদর উপজেলার বাসিন্দা ওমর ফারুক ও ছকিনা বেগম জানান, ‘নিজের কোনো জমি নেই। থাকার কোথাও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করছি। সরকারি কোথাও নিরাপদ স্থানে থাকার সুযোগ করে দিলে তারা এখান থেকে চলে যাবে।’
বান্দরবানের মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার একটি ফসল। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করার কারণে ভূমি ক্ষয় হয়। যা পরবর্তী সময়ে ধস আকারে নেমে আসে। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি এবং অতিবৃষ্টি মাটির গঠনকে দুর্বল করে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়ে ধস নামে।’
জেলা প্রশাসনের ডেপুটি নেজারত (এনডিসি) শামীম হুসেন বলেন, ‘পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা সদরে পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।’