এবার নার্সদের কক্ষ থেকে মিলল কোটি টাকার ওষুধ!
বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারী মেডিসিন ওয়ার্ডের সেবিকা কার্যালয়ের তিনটি কক্ষ থেকে এবার বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য সরকারিভাবে দেওয়া ওই ওষুধ কালোবাজারে পাচারের উদ্দেশে সেখানে জমা করা হয়েছিল বলে ধারণা করছে হাসপাতাল প্রশাসন।
এর একদিন আগে গতকাল শুক্রবার হাসপাতালে কর্মচারী কোয়ার্টারের পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় লক্ষাধিক টাকার সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
আজ উদ্ধার হওয়া ওষুধের মূল্য নির্ধারণ চূড়ান্ত না হলেও হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম জানান, উদ্ধার করা ওই ওষুধের মূল্য কম করে হলেও কয়েক কোটি টাকা।
উদ্ধার অভিযানে থাকা বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘হাসপাতালের কর্মচারী কোয়ার্টারের পুকুরে ভাসমান অবস্থায় লক্ষাধিক টাকার সরকারি ওষুধ উদ্ধারের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শেফালী বেগম ও তাঁর ছেলে মামুনের বাসা থেকেও বেশ কিছু সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়। পরে গোপন সূত্রে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ ওষুধ। এ সময় সেখানে কর্মরত ইনচার্জ নার্স বিলকিস জাহানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা ওষুধের গণনা ও মূল্য নির্ধারণ চলছে।’
হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকা প্রতিদিন স্টোর বিভাগে দিতে হয় নার্সদের। সেই অনুযায়ী তাদের প্রতিদিন ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সেই ওষুধ তাদের রোগীদের দিতে হয়। সেই হিসেবে তাদের কাছে কোনো ওষুধ থাকার কথা নয়। কিন্তু কার্টনে কার্টনে ভরা বিপুল পরিমাণ ওষুধ কীভাবে তাঁরা জমা করলেন তা রহস্যজনক।
তিনটি তদন্ত কমিটি : এদিকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুর থেকে সরকারি ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় ১২ সদস্যের পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম এসব কমিটি গঠন করেন। এই ঘটনায় আটক হাসপাতাল কর্মচারী শেফালী বেগম ও তাঁর ছেলে মামুনের বিরুদ্ধে সরকারি ওষুধ বিক্রির দায়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
তিনটি কমিটির মধ্যে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ওষুধের তালিকা ও বণ্টনের হিসাব তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. আবদুল কাদিরকে। সদস্যরা হলেন মেডিসিন বহির্বিভাগের আরপি ডা. এম আর খান, মেডিসিন-১ ইউনিটের রেজিস্ট্রার ডা. মো. সালমান হোসেন, মেডিসিন ২-এর রেজিস্ট্রার ডা. গোলাম ইসতিয়াক কল্লোল, মেডিসিন ৩-এর রেজিস্ট্রার ডা. মুহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম ও মেডিসিন ৪-এর রেজিস্ট্রার ডা. নওয়াজ হোসেন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে পরিচালক কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ওষুধগুলো হাসপাতালের মেডিসিন সাব-স্টোরের কি না, তা তদন্ত করার জন্য সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মশিউল আলমকে প্রধান করে অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. ফজলুল হক পনির ও উচ্চমান সহকারী মো. গোলাম ফারুক মৃধা।
এ ছাড়া ওষুধগুলো হাসপাতালের মেডিসিন মেইন স্টোরের কি না, তা তদন্ত করার জন্য সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভাণ্ডার) ডা. মো. ইউনুস আলীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আবদুর রহিম ও অফিস সহকারী সৈয়দ মাকসুদুল আলম। আজকের অফিস সময়ের মধ্যে দুটি তদন্ত কমিটিকে পরিচালক কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ হয়।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন জানান, এ ঘটনায় এরই মধ্যে আটক দুজনের বিরুদ্ধে উপপরিদর্শক (এসআই) অরবিন্দু বাদী হয়ে সরকারি ওষুধ বিক্রির দায়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে আরো তদন্ত করা হচ্ছে।