সাত খুন : পলাতকদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের নির্দেশ
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের পক্ষে আগামী সাতদিনের মধ্যে আইনজীবী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইংকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত এ মামলার আরেক আসামি সৈনিক আবদুল আলিমের আপিল আমলে নিয়ে শুনানির আদেশ দিয়েছেন।
গত ১১ মে নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার শুনানি করতে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আজ আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নির্ধারণ ও আসামিদের পক্ষে যেসব আইনজীবী অংশ নেবেন,তাঁদের তালিকা জমা দেওয়া হয়। আজ আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নূর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত এবং জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিদের বিচারিক আদালতের করা জরিমানা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত নূর হোসেন,তারেক সাঈদসহ আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সাত খুন মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। এরই মধ্যে এই মামলার ছয় হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি নয় আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই র্যাবের সাবেক সদস্য।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া র্যাব ১১-এর সাবেক সদস্যরা হলেন—চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দ বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম ও সার্জেন্ট এনামুল কবীর।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বাকিরা হলেন—সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, তাঁর সহযোগী মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী, আলী মোহাম্মদ, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান (চার্চিল), সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন। মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের মধ্যে সেলিম, সানাউল্লাহ ও শাহজাহান পলাতক।
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পেয়েছেন র্যাব ১১-এর সাবেক সদস্য এএসআই আবুল কালাম আজাদ (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), এএসআই বজলুর রহমান (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), এএসআই কামাল হোসেন (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), করপোরাল মোখলেছুর রহমান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), করপোরাল রুহুল আমিন (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), হাবিলদার নাসির উদ্দিন (সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর), কনস্টেবল বাবুল হাসান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর), কনস্টেবল হাবিবুর রহমান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর, সাক্ষ্য-প্রমাণ সরানোর দায়ে ৭ বছর) ও সৈনিক নুরুজ্জামান (অপহরণের দায়ে ১০ বছর)।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন।
তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরের দিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।