দোষ স্বীকার নাঈমের, রিমান্ড চাইবে পুলিশ
রাজধানীর বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ধরা পড়ার পর গভীর রাতে নাঈম আশরাফকে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা সে স্বীকার করেছে। বাকি আসামিদের যার যা ভূমিকা ছিল, সেটি অনেকটাই স্বীকার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, বনানীর ঘটনায় আর কারো মদদ আছে কি-না এবং ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা কী ছিল, তা বের করতে নাঈম আশরাফকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। এরপর বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন গোয়েন্দারা।
দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এর আগে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, তাঁর বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে নাঈমকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এই মামলার সব আসামিই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আসে।
জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। ওই মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তাঁর মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিনে দুই ছাত্রী যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তাঁর বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাঁদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তাঁরা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। সেখানে আরো দুই তরুণী ছিলেন। বাদী ও বান্ধবী দেখেন সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তাঁরা চলে যেতে চান। এই সময় আসামিরা তাঁদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাঁকে খুব মারধর করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন এবং তিনি প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তাঁরা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা তাঁরা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন। এতে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।