বিয়ের সানাইয়ে ভাঙল প্রেমিকার অনশন
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করেছেন পুরো এক সপ্তাহ। তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়াতে নানা রকম চেষ্টা করেছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু অনশনের কাছে হার মানেন সবাই।
এক সপ্তাহ পর সেই প্রেমিক বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে বাজে বিয়ের বাদ্য-সানাই। অনশন ভাঙেন প্রেমিকা। বসেন বিয়ের পিঁড়িতে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের বানছারাম গ্রামে প্রেমিক অমল চন্দ্র বর্মণের বাড়িতে বিয়ের ঘটনা ঘটে। এতে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের কয়েক শ মানুষ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন।
বিয়ের পর প্রেমিকা সুরবালা রায় শিল্পীকে খুব খুশি দেখালেও বর অমল চন্দ্র বর্মণকে মুখ বেজার করে রাখতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর অমল চন্দ্র বর্মণ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের বানছারাম গ্রামের নিবারণ চৌধুরীর ছেলে। ডিগ্রি পাস করে বর্তমানে তিনি বেকার। তাঁর সঙ্গে সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই মণ্ডলপাড়া গ্রামের এনজিওকর্মী সুরবালা রায়ের চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। গত এক বছর ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সুরবালা রায়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন প্রেমিক অমল চন্দ্র। বিষয়টি জানাজানি হলে সুরবালা রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ছেলের পরিবারকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ছেলের পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে অমল চন্দ্র নানা টালবাহানার পাশাপাশি অন্যত্র বিয়ে করার চেষ্টা চালান। এর একপর্যায়ে উপায় না পেয়ে গত ২৪ মে রাত ১০টার দিকে বিয়ের দাবিতে অমলের বাড়িতে যান সুরবালা রায়। টের পেয়ে প্রেমিক অমল কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর অমল চন্দ্রের পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে নানা চেষ্টা ও কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু বিয়ে না হলে ছেলের পরিবারকে আত্মহত্যা করার হুমকি দিতে থাকেন সুরবালা রায় শিল্পী। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে প্রতিদিনই অনশনস্থলে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে।
ঘটনাটি নিয়ে শহরজুড়ে তোলপাড় শুরু হলে মোগলবাসা ইউপির চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবলু এবং ইউপি সদস্য আবদুস ছালাম ও সবুজ প্রেমিক অমলকে হাজির করে সুরবালার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর পরিবারকে চাপ দেন। অমল গত বুধবার সকালে বাড়িতে হাজির হন। এরপর রাতে পারিবারিকভাবে ধুমধাম করে অমল-সুরবালার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
সুরবালা রায় শিল্পী বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের পর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পেরে আমি খুশি। আমি সবার কাছে আশীর্বাদ চাই যেন আমি আমার মনের মানুষকে নিয়ে সুখী হতে পারি।’
প্রেমিক অমল চন্দ্র বর্মণের কাছে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে মাথা নেড়ে বিয়েতে তাঁর সম্মতির কথা জানান।
অমল চন্দ্রের বাবা নিবারণ চৌধুরী ছেলের বিয়ের ব্যাপারে কোনো অনুভূতি প্রকাশ না করলেও প্রেমিকা সুরবালা রায় শিল্পীর বাবা সম্মারু চন্দ্র বর্মণ মেয়ের বিয়েতে খুব খুশি বলে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস ছালাম বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোগলবাসা ইউপির চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বাবলু বলেন, ‘বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। বিয়ের ছবি তুলেছি।’
যোগাযোগ করা হলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সোবহান বলেন, ছেলের বাড়িতে প্রেমিকার অনশনের ঘটনাটি শোনার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।