রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত ২৯
টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা, সদস্যসহ ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ জন, কাউখালী উপজেলায় ১২ জন, কাপ্তাই উপজেলায় দুজন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া শহরের পাশে মানিকছড়ি এলাকায় উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে জানানো হয়েছে, হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ, নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া গাছচাপা পড়ে কাপ্তাই উপজেলায় আরো একজন নিহত হয়েছেন। নদীতে নিখোঁজ আছেন একজন।
বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়। অনেক স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় নৌযান চলাচল।
এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কিছু লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাশের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রাশিদুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ সকাল ৭/৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষায় পাহাড় ধসের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক পুনরুদ্ধারে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর একটি দল। সংযোগ সড়ক পুনরুদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মানিকছড়ি এলাকায় সেনা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন।’
এ ছাড়া কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং এখনো কয়েকজন নিখোঁজ আছেন। সে কারণে হতাহতের সংখ্যা সঠিক বলা যাচ্ছে না বলেও জানান আইএসপিআরের পরিচালক।
নিহত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন হলেন মেজর মাহফুজ ও ক্যাপ্টেন তানভীর। নিহত দুই সেনাসদস্যের নাম পাওয়া যায়নি। এ সময় আহত চার সেনাসদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান।
ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে এসপি আরো জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড় ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে জানান, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাহাড় ধসে নিহত সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন তানভীরের লাশ এসেছে। এ ছাড়া আরো তিন সেনাসদস্য এখানে ভর্তি হয়েছেন।
শহরে নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন—রুমা আক্তার, নুড়িয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালী চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুস মল্লিক, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস। তাঁরা শহরের যুব উন্নয়ন ও ভেদভেদি এলাকায় বসবাস করতেন।
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা একটা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। শহরের যুব উন্নয়ন, ভেদভেদি, শিমুলতলি, রাঙাপানিসহ অনেক স্থানেই এখনো মানুষ মাটি চাপা পড়ে আছে।’
এদিকে, জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে উনু চিং মারমা (৩০) ও নিকি মারমা (১২) নামের দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছায়া মং মারমা।
এ ছাড়া উপজেলায় গাছচাপা পড়ে আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন। তিনি আরো জানান, কর্ণফুলী নদীতে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বাড়তি ইউনিট কাজে যোগ দিতে আসছে।