ওবায়দুলের আলটিমেটামের পরও হয়নি আ. লীগের নগর কমিটি
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি করতে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাঁর বেঁধে দেওয়া সময় ৩১ মের পর তিন সপ্তাহ হতে চললেও হয়নি কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এনটিভি অনলাইনকে জানান, টাকার বিনিময়ে কমিটি প্রদান, সিন্ডিকেট বাস্তবায়ন, স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের প্রভাবে এ কাজটি নির্ধারিত সময়ে হয়নি।
তবে এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন কমিটি প্রদানে দায়িত্বরতরা। তাঁরা বলেছেন, কাজটি অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে সময়ও চেয়ে নিয়েছেন তাঁরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ঈদের আগে এবং ঈদের পর ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন তাঁরা।
২২ মে সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ৩১ মের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। এর আগে ১০ মে সোমবার জাতীয় সংসদে তাঁর কক্ষে মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাদের ডেকে নিয়ে একই নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, ওবায়দুলের নির্দেশ অনুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে পুরোদমে কমিটির কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ করা যায়নি। তবে কয়েকটি থানার কমিটি ঘোষণা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি আছে। বাকি কাজ ঈদের পর পরই সম্পন্ন হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘আমাদের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঈদের আগেই ঘোষণা আসতে পারে।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৩১ মের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৬০টি কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ ঘোষণা করার নির্দেশ ছিল ওবায়দুল কাদের। এর মধ্য দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন প্রতিটি কমিটিতে গড়ে ৬৩ জন করে মোট স্থান পাবেন ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী।
দুই ভাগে বিভক্ত নগর কমিটিতে মোট ৫০টি থানা, ৯৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন আছে। এর মধ্যে উত্তরে ২৬টি থানা, ৩৬টি ওয়ার্ড ও নয়টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে রয়েছে ২৪টি ওয়ার্ড, ৫৭টি থানা ও আটটি ইউনিয়ন।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে প্রতিটি থানা কমিটিতে ৩৪ জন কর্মকর্তা ও ৩৩ জন সদস্যসহ মোট ৬৭ জন সদস্য থাকবেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে (মহানগর) ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ জন সদস্যসহ মোট ৬৫ জন সদস্য থাকবেন। আর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে ৩০ জন কর্মকর্তা ও ৩৫ সদস্যসহ ৬৫ জন থাকবেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে বিভক্ত করে গত বছরের এপ্রিলে উত্তরে এমপি এ কে এম রহমতউল্লাহকে আর দক্ষিণে হাজি আবুল হাসনাতকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। অবিভক্ত মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে বিভক্ত কমিটিতে কোনো দায়িত্বে রাখা হয়নি। একই সঙ্গে নগরের মূল কমিটির পাশাপাশি ৪৯টি থানা ও ১০৩টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নামও ঘোষণা করা হয়।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনের তিন বছর তিন মাস পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ঢাকার ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের অন্তর্গত ৪৫টি থানা এবং ১০০টি ওয়ার্ডে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। হয়নি ইউনিয়নগুলোরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি।