আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে কেউই নিরাপদ নই
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত জাতীয় সম্মেলনে ঘোষণাপত্রের আলোকে এবং আগামী প্রজন্মের কথা বিবেচনা করেই এই ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি, প্রস্তাবিত বাজেট ও ভাবনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর।
এনটিভি অনলাইন : বাজেটকে উন্নয়নমুখী ও গণমুখী বলছে আওয়ামী লীগ। তবে কিন্তু আবগারি শুল্কসহ কিছু বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
এনামুল হক শামীম : এটা পরবর্তী নির্বাচনী বাজেট নয়, পরবর্তী প্রজন্মের বাজেট। পরবর্তী প্রজন্ম কীভাবে উপকৃত হবে, তাদের উন্নয়ন হবে; তা চিন্তা করেই এই বাজেট দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাজেট পাসের আগেই কিছু কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে এটা ঠিক। যেমন ব্যাংকের বিষয়টা এসেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক লাখ টাকা থাকলেই তাঁরা সম্পদশালী। আমি মনে করি- এটা ঠিক নয়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যতটুকু জানি, তিনিও এগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। নিশ্চয় এমন কিছু করবেন না, যাতে জনগণের ক্ষতি হবে, তাঁরা অসস্তুষ্ট হবেন। মানুষের লোকসান হবে এমন বিষয় বাজেটে থাকবে না বলে আমি মনে করি।
এনটিভি অনলাইন : সম্প্রতি হেফাজত ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতার বিষয়ে বিএনপিসহ অভিযোগ তুলছে অনেকেই।
এনামুল হক শামীম : আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করেনি। কওমি মাদ্রাসায় আছে ১৬ লাখ ছাত্র। তারা দেশের নাগরিক, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের একটা সিস্টেমে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে সরকার।
এনটিভি অনলাইন : অভিযোগ উঠেছে, সরকার হেফাজতে ইসলামকে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। সংস্কৃতি কর্মীরা এ অভিযোগ করছেন।
এনামুল হক শামীম : সংস্কৃতিকর্মীরাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চা করার সুযোগ পান না। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বলেন, এগুলোতেও আমরা কাজ করেছি। মনে রাখতে হবে, কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষতায় থাকলেই তাঁরা নিরাপদে থাকেন। এছাড়া কেউ দেশেই থাকতে পারেন না। সুতরাং আমি বলব পান থেকে চুন খসলেই সমালোচনা না করে সহযোগিতা করা উচিত। আমরা তো তাদের বাইরে না।
আমি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। আমি ট্রাকে করে জাহানারা ইমামের সমাবেশে ছাত্রদের নিয়ে আসতাম। শহীদ মিনারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশে পাহারা দিয়েছি। পুলিশ ধরে পিটুনি দিয়েছে। তারপরও মঞ্চ দখলে রেখেছি। সুতরাং বলব, শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আছেন তাঁকে সহযোগিতা করুন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে আপনারা, আমরা কেউই নিরাপদ নই।
এনটিভি অনলাইন : দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের কী অবস্থা?
এনামুল হক শামীম : যে সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়েছে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা করে জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে।
সংগঠনের কার্যক্রম চলছে, আমরা বসে নেই। রোজার মধ্যেও করছি। শুধু ঢাকা মহানগরই নয় দ্রুতই সারা দেশের যে জেলাগুলোতে কমিটি অপূর্ণাঙ্গ আছে যেগুলোতে পূর্ণাঙ্গ করা হবে। কুমিল্লা মহানগরে দীর্ঘদিন কমিটি ছিল না, ২০ তারিখের আগেই করে দিচ্ছি। চাঁদপুর বাকী আছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা রয়েছে। করে ফেলব।
সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা এবং সরাসরি সাধারণ সম্পাদক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশেই ২০১৯ সালের নির্বাচন উপযোগী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য যা যা করার দরকার তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কাজ করেছি।
আমাদের সম্মেলনে হয়েছে প্রায় সাত মাস। এর মধ্যে প্রায় সকল জেলা সফর হয়ে গেছে। প্রতিনিধি সম্মেলন করে আমরা ভালো ফল পাচ্ছি। প্রতিনিধি সম্মেলন করা আগে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আমি জেলা, উপজেলা ও থানার সার্বিক কি অবস্থা তা নিয়ে স্টাডি করি। জেনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেগুলো নেই। প্রয়োজনে সাধারণ সম্পাদকদের নির্দেশনা নেওয়া। যদি মনে করি- তাহলে আমাদের মাননীয় নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করি। সংগঠনকে নির্বাচন উপযোগী করে একটি সুশৃঙ্খল দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতো যা যা করার দরকার সেগুলো করে যাচ্ছি।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন ও উদ্যোগের পরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমেছে?
এনামুল হক শামীম : অবশ্যই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দীর্ঘদিন মুখ দেখাদেখি ছিল না। আমি নিজে গিয়ে তাদের নিয়ে একসঙ্গে প্রতিনিধি সভা করেছি। মে দিবসে শ্রমিক লীগের দুটি আলাদা অনুষ্ঠান ছিল, সেটাকে এক করেছি। এরপর প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে। এখনো চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কোনো খবর শোনা যায়নি। এছাড়া কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি সব জায়গায় কিন্তু একত্রে করেছি।
এনটিভি অনলাইন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ইশতেহার তৈরির কাছ শুরু করেছে কি না? করলে কাজ কতদূর এগিয়েছে?
এনামুল হক শামীম : আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে এইচটি ইমামের নেতৃত্বে একটি দল এই ইশতেহার তৈরির কাজ করছেন। আমাদের সম্মেলনে ঘোষণাপত্র দেশের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই করা। সুতরাং সেটা তো থাকবেই। একই সঙ্গে আগামী প্রজন্মের কথা বিবেচনা করেই তৈরি করা হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার।