লাইন ধরে টিকেট কিনে বেলাইনে বিক্রি
কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রবেশের আগেই চোখে পড়বে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প। স্টেশনজুড়েই আছে তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি। আছে সিসি ক্যামেরা, পুলিশ ও আনসারের বিচরণ। এ ছাড়া ছদ্মবেশে প্রশাসনিক তৎপরতা তো আছেই। এত সব নিরাপত্তা ভেদ করে প্রকাশ্যে টিকেট বাণিজ্য সম্ভব নয় ভেবে এক শ্রেণির মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকেট কিনেছেন। আর এসব টিকেট চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে স্টেশনের বাইরে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অগ্রিম টিকেট কিনতে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাই। কাউন্টার থেকে আমাদের জানানো হয়েছে ট্রেনে টিকেট নাই। তাদের স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য কম্পিউটার স্ক্রিন দেখিয়ে দেন। পরে হতাশা নিয়ে ফেরার সময় স্টেশনে প্রবেশের পূর্বে যাত্রীছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে থেকে একজন ডাকেন এবং টিকেট লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করেন। ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে নেই। এ রকমভাবে সেখানে অনেককেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।’
একই ট্রেনের যাত্রী ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আজই টিকেট কিনেছি। আমাকে ঘুরতে দেখে এক ব্যক্তি ডাক দেন এবং ৩০০ টাকা বেশি নিয়ে টিকেট দেন। সেটাতে যত বেশি আহত হয়েছি তার চেয়ে বেশি হয়েছি সিটের আশপাশে ফাঁকা জায়গায় যাত্রী দেখে। সিটে বসে শরীরের কোনো অংশ নাড়াচাড়া করার সুযোগ নেই। এভাবে কি এতদূরের জার্নি করা যায়?’
সিল্ক সিটি দিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা এক যাত্রী জানান, ঢাকায় আসতে তেমন সমস্যা হয়নি, নির্ধারিত সময়েই এসেছে ট্রেন। তবে তিনিও বেশি টাকা খরচ করেই টিকেট কিনে ঢাকায় এসেছেন।
হাওর এক্সপ্রেসের যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী রুবেল মিয়া জানান, ‘ট্রেনে প্রবেশ করে কার ডিউটি কী সেটা বলা মুশকিল কিন্তু একটি জায়গায় সবাই এক তা হলো সবাই টিকেট বিক্রেতা। কেউ নিয়মানুযায়ী বিক্রি করছে, আবার কেউ বিক্রি করছে গোপনে। কিছু বলতে গেলে কয়েকজন মিলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’
এদিকে প্রবেশপথে এসে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে কাউকে বেশি টাকা নিতে দেখা যায়নি। রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী ‘ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে’ এক স্টেশন দূরত্বের টাকা বেশি নিয়ে টিকেট দেওয়া হচ্ছে।
এখানে বিক্রির কারণ জানতে চাওয়া হলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ‘এটা নতুন নয়, কেউ যেন টিকেট ছাড়া যেতে না পারে সে জন্য এখন প্রতিদিন এই ডিউটি করছি। অন্য সময় শুধু বৃহস্পতিবার এটা করে থাকি।’
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘আমরা খুব সতর্কতার সাথে কাজ করছি। এখানে কেউ নিয়মবহির্ভূতভাবে টিকেট ক্রয় করতে পারছে না। আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা কাজ করছি ফলে কেউ কারো পরিচয়ে দিয়েও কিনতে পারছে না। প্রত্যেককে লাইনে দাঁড়িয়ে কিনতে হয়েছে। তবে কেউ যদি লাইনে দাঁড়িয়ে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে এবং যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে তা কীভাবে রোধ করবেন বলেন? এ সমস্যা যাত্রী ছাড়া কেউ সমাধান করতে পারবে না। যাত্রীদেরও দায় থাকা চাই।’
সিতাংশু আরো বলেন, ‘ট্রেন শিডিউলে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষে পার্বতীপুর ও রাজশাহী লাইনে দুটি স্পেশাল ট্রেন দেওয়া হয়েছে।’