গুলশানের সেই বাড়ি সরকারের, ভাঙতে বাধা নেই
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর মওদুদ আহমদের দখলে থাকা গুলশানের ওই বাড়িটি এখন সরকারের। সুতরাং সরকার তা যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য নোটিসের প্রয়োজন নেই এবং এ নিয়ে দ্বিধার কোনো অবকাশ নেই।
আজ রোববার দুপুরে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এসব কথা বলেন।
মাহবুবে আলম বলেন, মওদুদ আহমদ দীর্ঘ চার দশক বেআইনিভাবে গুলশানের যে বাড়ি দখলে রেখেছিলেন, সেটি ভাঙতে কোনো আইনি বাধা ছিল না।
‘আপিল বিভাগ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে- এই সম্পত্তিটা গ্রাস করার জন্য কাগজপত্রগুলি জাল- জালিয়াতির আশ্রয়ে তৈরি করা হয়েছে। উনি কিছু মামলা করেছেন, সেটা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে। মামলার কারণে এই সম্পত্তি ভেঙে ফেলতে কোনো বাধা নেই।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মওদুদ আহমদ একবার নিজের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে বলছেন, আবার নিজে ওই বাড়ির দখল ফেরত চাইছেন। তাঁর কথার ভেতরেই স্ববিরোধিতা রয়েছে।
মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের বাংলাদেশে বহু বিদেশির সম্পত্তি আছে। কোনো বিদেশির সম্পত্তি নিয়ে কখনো প্রেস কনফারেন্স হয়েছে? এই প্রেস কনফারেন্স করার অর্থই হলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে দিয়ে আবার প্রচেষ্টা চালানো যে বাড়িটির মালিকানা নেওয়া।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গত ৭ জুন বাড়ি দখলমুক্ত করার সময় তাঁর অনেক মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে যাওয়া বা নস্ট হওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন, তাও অসম্পূর্ণ অসত্য বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, কারণ মওদুদু আহমদ নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সম্পদ তিনি যেখানে পাঠাতে বলেছেন, সেখানেই সযত্নে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া তিনি আদালতে রিট করেছেন, সেখানে একবারও বলেনিন যে, তাঁর কোনোকিছু হারানো গেছে।
আজ রোববার সকাল থেকে বাড়িটি ভাঙা শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ বিষয়ে মওদুদ বলেন, ‘বাড়ি ভাঙার বিষয়ে আমাকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। বাড়ি ভাঙতে আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। আদালতের নির্দেশনা ছাড়াই বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।’
‘গুলশানের বাড়িটির বিষয়ে উচ্চ আদালতে দুটি রিট মামলা বিচারাধীন আছে। বাড়িটি জোর করে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে আইনের শাসন নেই, আইনের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নেই।’
গত ৭ জুন প্রথম দফায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদের গুলশানের বাসায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজউক। দুপুর ১২টা থেকে দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত মওদুদ আহমদের গুলশান ২ নম্বরের বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পরে বাড়িটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এর পর রাজউকের শ্রমিকরা বাড়ির মালামাল বের করে তা ট্রাকে তোলেন। নিয়ে যান পাশেই থাকা মওদুদের স্ত্রীর বাড়িতে।
গত ৪ জুন গুলশানের বাড়ির মালিকানা বিষয়ে করা রিভিউ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ২ আগস্ট মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির নামজারির নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের আপিল গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। গত ৩০ আগস্ট এ মামলার ৮০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরে রিভিউ করেন মওদুদ।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়ি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেন। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর চলতি বছর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তাঁর ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাঁদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার দুটি বিষয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।
দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী অস্ট্রীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তাঁরা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
এর পর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তাঁর ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করে দুদক।