‘মনে অয় ঢাহায় কুনু মানুষ নাই’
‘ছুডি মুডি বুজি না, শইল্লে কুলাইলে কাম করি, নাইলে করি না। যেদিন কামাই হেইদিন নগত কাই (খাই), যেদিন কামাই না হেইদিন বাহি(বাকী) কাই। এইবায়েই আল্লা চালাইতাছে চল্লিশ বছর দইরা (ধরে)।’
আগামীকাল সোমবার ঈদ। আজ রোববার রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা। মতিঝিলে নিজ রিকশায় বিশ্রাম করছিলেন রিকশাচালক তাজউদ্দিন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। ঈদের ছুটি মিলল কি না জানতে চাইলে এভাবে মেলে ধরেছিলেন কথার ঝাঁপি।
তাজউদ্দিনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। পরিবারে আছে ছয় মেয়ে, দুই ছেলে, দুই নাতি। ৮ বছর আগে মারা গেছেন তাঁর স্ত্রী। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। দুই ছেলেও বিয়ে করে সন্তানাদি নিয়ে আলাদা সংসার করছেন। তাঁরা নিজেদের সামলাতেই রীতিমতো হিমশিম খান। তাই বৃদ্ধ বয়সেও খেয়ে পরে থাকার জন্য নিজেকেই অন্তহীন সংগ্রাম করতে হয়।
ঈদে বাড়ি না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তাজউদ্দিন জানান, ঈদ তাঁর কাছে ভিন্ন কিছু না। এই বয়সে শরীরের অবস্থা সব সময় ভালো থাকে না। এখন শরীর ভালো থাকায় ঈদেও তিনি কাজ করছেন। খুব বেশি ক্লান্তি এলে বাড়িতে যান। স্বাভাবিক হলে আবার ঢাকায় ফিরে এসে রিকশা চালান। এই রুটিন চলছে ১০ বছর ধরে তাঁর।
ঈদে ফাঁকা ঢাকায় তাজউদ্দিনের কোনো ভিন্ন অনুভূতি নেই। তাঁর ভাষ্য, ‘ঢাহা কালি (খালি) ওইলে আমরার কি লাব। গুরবাইন তো আমনেরা। আবুদুয়াইন(পোলাবান) লইয়া গুরইন, হাসইন। আমরা জায়গা মতন দিয়া টেহা লইয়া আরাম পাই। আইজ মনডা কারাপ সহাল তাইক্কা মাত্র দুইডা ক্যাপ (খেপ) দিছি। মনে অয় ঢাহায় কুনু মানুষ নাই। গরিবের শুক কামে- বুজ্জইন?’
সরাসরি কিছু না বললেও, তাঁর অঙ্গভঙ্গি, কথাবার্তায় বোঝা যায় জগৎজোরা অভিমান আর ঘোর অনিশ্চিয়তা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তাজউদ্দীন।
কথা শেষ হওয়ার আগেই তাজউদ্দীনের ভাষ্য, ‘বাই সাইড অইন এইনো তাহলে কাম অইত না, অন্যহান যাই।’
‘চাচা আপনার নামের বানান…’ বলতেই রিকশা চালাতে চালাতে উত্তর- ‘কইলাম তো তাজউদ্দীন। হরা লেহা নাই, নামের বানান জানি না।’