ঈদে বেতন পাননি, একমাত্র ছেলের জামাটাও কিনতে পারেননি
রাজধানীর একটি এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন রহিম মিয়া (ছদ্মনাম)। এবার ঈদুল ফিতরের আগে তিনি বেতন পাননি। তাই গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেননি। আবদার পূরণ করতে পারেননি একমাত্র ছেলের।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর একটি স্থানে রহিম মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, এবার ঈদে তাঁর কিশোর ছেলে একটি পাঞ্জাবি কিনে দেওয়ার আবদার করেছিল। তিনি ভেবেছিলেন, বেতন পেয়ে ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় ছেলের আবদারও পূরণ হয়নি, বাড়িও যাওয়া হয়নি।
এনটিভি অনলাইনের কাছে আবেগাপ্লুত রহিম জানান, ঈদের আগের দিন বেতন হবে হবে করে আর হলো না। লজ্জায় তিনি বাড়িতে যাননি। এতে স্ত্রী-সন্তান সমান কষ্ট পেয়েছে। ফোনে স্ত্রী অভিমানের সঙ্গে কথা বললেও নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু নাবালক ছেলেকে তো আর বোঝানো যাচ্ছে না। সে ভীষণ চটেছে বাবার ওপর।
‘ছেলের কান্না সইহ্য করা যায়? কী এমন আবদার কইরেছে আমার ছেলে, যা আমি পূরণ কইত্তে পারি না? জানেন, আমি বাপ হিসেবে ব্যর্থ হতি চাই না। কিন্তু হইয়ে যাই…’, বলে গলা ধরে যায় রহিমের।
‘আজ কতবার ফোন দিছি। কিন্তু আমার ছেলে তো কথা কয় না’, বলেন রহিম। এর পর মুঠোফোন থেকে ছেলের ছবিটা বের করে দেখিয়ে বলেন, ‘এই আমার ছেলে। গরিবের ঘরে রাজপুত্র না?’, যোগ করেন রহিম।
বলতেই থাকেন রহিম মিয়া। তাঁর গল্প যেন শেষ হচ্ছিল না। নিমেষেই ছেলের জন্ম থেকে বড় হওয়ার গল্প বলে ফেললেন। এর মধ্যে বউয়ের ফোন এলো। কথা শেষ করে কিছু না বললেও বোঝা গেল, এক ঝাঁপি কথা শুনতে হলো তাঁকে। জীবনসংগ্রামী মানুষের ব্যর্থতার ছবি ভেসে উঠল তাঁর মুখে। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছলেন তিনি।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে আবার বলতে শুরু করেন রহিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের অফিস আন্তরিক। কিন্তু স্যার দেশের বাইরে যাওয়ায় সমস্যায় পইড়ি গেলাম। এই কথাডা অবুঝ ছেলেটা যেমন বোঝে না, তার মা তো আরো বুঝতি চায় না। তাঁর কথা একটাই, আমি বাড়ি যাইনি কেন?’
এ সময় ছেলের একটা ভিডিও দেখালেন রহিম মিয়া। ভিডিওতে ছেলে ছড়া পড়ছে। আরেকটি ভিডিওতে স্কুলের প্রতিযোগিতায় গান গেয়ে প্রথম হয়েছে বলে পুরস্কার পাচ্ছে।
ছেলে সম্পর্কে রহিম বলেন, ‘পিএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার পর ওরে একটা হাতঘড়ি কিন (কিনে) দিছিলাম। সে কী আনন্দ! পাঞ্জাবিটা পেলেও হয়তো এভাবেই আনন্দ কইরত। বন্ধুদের নি (নিয়ে) দেখাত। জানি না, এই মুহূর্তে কী করছে। ওর মায় বলল, কাল সে ঈদের মাঠে যায়নি।’
‘পকেটে টাকা থাকুক আর না থাকুক, জীবনে আর কোনো ঈদ স্ত্রী-সন্তান ছাড়া করব না’, বলে কথা শেষ করেন রহিম মিয়া।