সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচারপতিদের অপসারণে সামরিক সরকারের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখার পর আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কেন এটাকে সাংঘর্ষিক মনে করছে না, তা আমার বুঝে আসছে না। রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণ করব।’
আনিসুল হক আরো বলেন, ‘১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়ে যে অনুচ্ছেদ ছিল, আমরা হুবহু সেটাই পুনর্বহাল করেছি। সুপ্রিম কোর্ট এখন এটাকে বাতিল ঘোষণা করেছেন।’
আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর পরই এক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়নি; বরং শূন্যতা বিরাজ করছে। এ রায়ে আমি হতাশ।’
তবে একে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া আপিলের শুনানিতে এতে মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন, যার মধ্যে নয়জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।
রায়ের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাদের সংবিধান অনুযায়ী আমরাও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছি।’
আনিসুল হক বলেন, ‘৯৬ অনুচ্ছেদ কী করে পুনঃস্থাপন করার পরে একটা মার্শাল ল গভর্নমেন্ট এটাকে সরিয়ে দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনার পরে, এটাকে আবার সংসদ পুনঃস্থাপন করার পরে এটা কীভাবে আলট্রা-ভায়োলেট টু দ্য কনস্টিটিউশন হয়, এটা আমি বুঝতে পারছি না। পূর্ণাঙ্গ রায় হওয়ার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব, আমরা কী করব।’
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়নি বলেও দাবি করেন আইনমন্ত্রী।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করবে—এমন যুক্তিতে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ১০ মার্চ মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৫ মে রায় দেন আদালত।