ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি
‘অপহৃত’ কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে খুলনা মহানগরীর শিববাড়ী এলাকার ইব্রাহিম মিয়া সড়কের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছেন র্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। আজ সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে অভিযান শুরু করেন তাঁরা। রাত ৯টা পর্যন্ত এলাকার আট থেকে দশটি বাড়ির ২০ থেকে ৩০টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত ফরহাদ মজহারের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
র্যাব-৬ সূত্রে জানা গেছে, র্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে র্যাবের কয়েকটি দল এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। মোবাইল কল ট্র্যাকিং করে শিববাড়ী এলাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় ফরহাদ মজহার ব্যবহৃত মুঠোফোনের অবস্থান শনাক্ত করে। এলাকার ইব্রাহিম মিয়া সড়কের কয়েকটি বাড়ির ওপর র্যাবের সন্দেহ একটু বেশি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে এলাকার আট থেকে দশটি বাড়ির ২০ থেকে ৩০টি ফ্ল্যাটে কয়েক দফা তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। এলাকাটি ঘনবসতি এবং চারদিক থেকে গলিপথ দিয়ে বের হওয়ার সুযোগ থাকায় র্যাব সদস্যরা কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন। এসব এলাকার বাড়ির বাসিন্দাদের তল্লাশি ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে দিচ্ছে না র্যাব। যানবাহন তল্লাশির জন্য কেডিএ সংযোগ সড়কে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছিল। তবে রাত ৮টার পর আর কোনো তল্লাশি চৌকি দেখা যায়নি।
র্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ফরহাদ মজহারকে আজ দুপুরে ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে র্যাব ৬-এর কাছে খবর আসে। পরে বিকেল ৫টার দিকে ফরহাদ মজহারের মুঠোফোন একবার খুললেই র্যাব-৬ তৎপর হয়ে ওঠে। তারপর সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে এলাকা ঘিরে টানা অভিযান চালানো হচ্ছে। র্যাবের অধিনায়ক নিশ্চিত করে বলেন, মোবাইল ট্র্যাকিং করে তাঁরা নিশ্চিত যে মোবাইলটি শিববাড়ী এলাকার ইব্রাহিম মিয়া সড়কে এক দফা ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বিকেলের পর আর মোবাইল চালু করা হয়নি।
এর আগে আজ বিকেলে ফরহাদ মজহারের রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের এক নম্বর বাড়িতে তাঁর বন্ধু গৌতম দাস সাংবাদিকদের জানান, ভোর ৫টার দিকে শ্যামলীর রিং রোডের এক নম্বর বাসার সামনে থেকে কে বা কারা ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাঁকে নিয়ে যাওয়ার আধ ঘণ্টা পর ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্ত্রীর কাছে টেলিফোন আসে। ফোনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন।
এরপর বিষয়টি আদাবর থানার পুলিশকে জানানো হয় বলে জানান গৌতম। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফরহাদ মজহার কেন এত ভোরে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গৌতম দাস জানান, ফরহাদ মজহার রাত ৩ থেকে ৪টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর তিনি বিভিন্ন পড়াশোনা ও লেখালেখির কাজ করেন। কিন্তু কেন তিনি আজ এত সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি গৌতম দাস।
বাড়ির দু-একজন নিরাপত্তারক্ষী ফরহাদ মজহারকে বাসা থেকে বের হতে দেখেছেন বলে জানান তাঁর আরেক বন্ধু মোস্তাইন জহির। কিন্তু তাঁকে কেউ নিয়ে গেছে কি না সেটি তাঁরা দেখেননি। জহির আরো জানান, ভবনের নিচে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখা গেছে যে তিনি ভবন থেকে বের হচ্ছেন।
ফরহাদ মজহারের অপহরণের খবর পেয়ে তাঁর বাসায় যান পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বিকেলে যখন ফরহাদ মজহার আরেকবার টেলিফোন করেন, তখন সেখানে পুলিশের একজন অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক, আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) উপপরিদর্শক পর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।