আবার জাদু দেখাবেন জুবিন
জুবিন ফয়সাল একজন ক্রিকেটার ছিলেন। অফস্পিন করতেন। তাঁর দুজন সতীর্থ বেশ বিখ্যাত। একজন সাকলাইন মুশতাক, অন্যজন শাহরিয়ার নাফীস। বল হাতে শুধু নয়, জুবিন জাদু দেখাতেন ক্যামেরা দিয়েও। তাঁর তোলা ছবি পেয়েছে একাধিক পুরস্কার!
জুবিন ফয়সালের (৩১) ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। ডান পা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত খুব শোচনীয় অবস্থা।
গত ২ জুলাই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন জুবিন। হোটেল রূপসী বাংলার (শেরাটন) মোড়ে উল্টোদিক থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে জুবিনের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। জুবিনের মোটরসাইকেল চলে যায় ওই গাড়ির নিচে। রাস্তার একপাশে ছিটকে পড়েন জুবিন।
ছিটকে পড়েছে জুবিনের ভবিষ্যৎও। মা সাইদা আখতার ও বাবা জাহিদ আনোয়ারের একমাত্র ছেলে জুবিন প্রচণ্ড মেধাবী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করেন। সেদিন অফিস শেষ করে মহাখালী থেকে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। রূপসী বাংলার মোড় ঘুরতেই উল্টো দিক থেকে তেড়ে আসে জিপগাড়ি।
নটর ডেম কলেজে পড়ার সময় ক্রিকেট খেলে নজর কাড়েন জুবিন। এ সময় শাহরিয়ার নাফীস ছিলেন তাঁর সতীর্থ। পরে শাহরিয়ার নাফীস জাতীয় দলে নাম লেখান। তবে জুবিনের ইচ্ছে ছিল পড়াশোনায়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখানে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ নিয়ে পড়াশোনা করেন।
ক্রিকেটের নেশা ছাড়েনি জুবিনকে। নটিংহ্যামশায়ার লিগে ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত খেলেন তিনি। জুবিনের দলের নাম ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্যাভেলিয়ার্স। ওই দলে তাঁর সতীর্থ ছিলেন সাকলাইন মুশতাক, অ্যালেক্স টিউডর, উসমান আফজাল, জিম্বাবুয়ের পেসার পানিয়াঙ্গা। দুই বছর আগেও জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এলে জুবিনের সঙ্গে দেখা করেন পানিয়াঙ্গার সতীর্থরা।
কেবল খেলেই যাননি জুবিন। ২০১১ সালে ওই লিগে সর্বোচ্চ ৮৮ উইকেট পেয়েছিলেন সাকলাইন মুশতাক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ছিল জুবিনের। তিনি পেয়েছিলেন ৫১ উইকেট।
সাকলাইন বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিসেবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেন। তখন জুবিনকে ক্রিকেটে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। জুবিন অবশ্য আর বল তুলে নেননি।
জুবিনের ছবি তোলার শখ অনেক। দেশের নানা জায়গায় ঘুরেছেন, ছবি তুলেছেন। বিদেশে গিয়েছেন, ছবি তুলেছেন। প্রকৃতি আর মানুষের মুখ জুবিনের প্রিয় বিষয়। যেনতেন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, জুবিনের ছবির স্বীকৃতি দিয়েছে খোদ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল। ওই চ্যানেলে ওয়েবসাইটে ঠাঁই পেয়েছে জুবিনের ৩১টি ছবি!
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছবি তোলার নেশাটা পেয়ে যায়। আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছেন জুবিন। তবে ছবি তোলাকে পেশা হিসেবে নেননি। ক্রিকেটকেও না।
বন্ধুবান্ধবে-ঘেরা ছিমছাম একটা জীবনই চেয়েছিলেন জুবিন। বন্ধুদের মধ্যে জুবিন ছিলেন সেরা। জুবিনের বন্ধু সৈয়দ জামান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি জানান, কোনো বন্ধু যদি গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলে, ‘জুবিন আমি বিপদে আছি।’ জুবিন ওকে সাহায্য করার জন্য ওই সময়েই বেরিয়ে পড়ত। পুরো সমস্যার সমাধান করে বাড়ি ফিরত।
লিফট দিয়ে গেলে স্কয়ার হাসপাতালের ষষ্ঠতলা। একটি বিভাগ আছে, নাম ‘হাই ডিপেনডেনসি ইউনিট’ (এইচডিইউ)। সেখানেই আছেন জুবিন। তাঁর কাছে কেবল তাঁর মা যেতে পারেন। অন্যদের থাকতে হয় দূরে।
জুবিনের বন্ধুরা প্রতিদিন ভিড় জমান এইচডিইউর সামনে। তাঁদের আশা জুবিন উঠে দাঁড়াবেন। নির্মল একটা হাসি দেবেন, যেন এইমাত্র পাঁচটি উইকেট শিকার করে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। কিংবা অসাধারণ কোনো দৃশ্য আটকা পড়েছে তাঁর ক্যামেরায়!