‘অসহায় বিচারপ্রার্থীর জন্য আমার মন কাঁদে’
অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। সম্প্রতি বিচার অঙ্গনে তাঁর ৫০ বছরপূর্তি পালন করেন। বিচার অঙ্গনে মেধা ও মনোমুগ্ধকর যুক্তিতর্ক দিয়ে মামলা জয়ের জন্য তিনি সুনাম ধরে রেখেছেন। আদালতপাড়ায় গরিবের আইনজীবী হিসেবে তিনি খ্যাত। অনেক ত্যাগ, ধৈর্য, কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে তিনি আজ এ পর্যায়ে আসীন হয়েছেন।
এখনো স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন আশি ছুঁই ছুঁই এই স্বপ্নবাজ তরুণ। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি তিনি। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যানও।
আইনজীবীদের সবার আর্থিক সঙ্গতি সমান নয় তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে সারাদেশে আইনজীবী সমিতির জন্য ট্রাস্ট গঠন করেছেন বাসেত মজুমদার। গত কয়েক বছরে দেশের ৪৮টি আইনজীবী সমিতির প্রত্যেকটিতে দুই লাখ করে টাকা দিয়েছেন। এর লভ্যাংশ থেকে আইনজীবীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে।
সাধ্যমতো সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় বা নামমাত্র পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। তাঁর মতে, ৫০ বছরের ওকালতি জীবনে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে এভাবে বিনা পয়সায় বা নামমাত্র পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘দুস্থ, অসহায় বিচারপ্রার্থীর জন্য আমার মন কাঁদে। তাদের জন্য সব সময় কিছু করার চেষ্টায় থাকি।’
সম্প্রতি একান্তে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জাকের হোসেন।
এনটিভি অনলাইন : আপনার নাম ও পরিচয় সম্পর্কে যদি জানান...
আবদুল বাসেত মজুমদার : ছোটবেলায় বাসেত নামেই সবাই ডাকত। কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জের মজুমদার বাড়িতে ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করি। বর্তমানে বয়স ৭৯ বছর চলছে। বাবার নাম আবদুল আজিজ মজুমদার। মা জোলেখা বিবি। দুজনে গত হয়েছেন বহু বছর হয়ে গেল। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান।
ছয় বোনের পর প্রথম ছেলে সন্তান ছিলাম বলে আকাশচুম্বী আদর স্নেহ পেয়েছি। এ কারণে শত অন্যায় কাজ করলেও সাত খুন মাফ ছিল। বাবার অতিরিক্ত আদর পেয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ ছিলাম না। গ্রামের এই বাড়ি ওই বাড়ি ঘুরে ফিরে,পাখির বাসা নষ্ট করা,বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে নারিকেল-সুপারি পাড়া, খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি তৈরি, গোল্লাছুটসহ নানান ধরনের খেলাধুলা করে দিন পার করতাম। অনেকটা এলোমেলোর মধ্যে জীবন কাটত।
আসলে সত্যিকথা বলতে কি পড়ালেখা কোনোভাবে আমাকে টানত না। বাবার তালুকদারি ছিল। দৌলতগঞ্জ বাজারের আড়ৎদার ছিলেন। শত শত মন ধান উঠাতো। আর আমি বাবার অজান্তে অনেক সময় ধান বিক্রি করে বন্ধুদের নিয়ে খরচ করতাম। সেই এক দুরন্তপনা ছিল। স্কুলটা কোনো মতে দায়ে পড়ে ধরে রেখেছি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করলাম।
স্কুল জীবনে প্রাথমিক জীবন শেষ করার পর হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। তখনকার আমলে পঞ্চমশ্রেণি থেকে হাইস্কুল জীবন শুরু হতো। আমাদের বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। ওই স্কুলের নাম ছিল অতুলহাই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে হাঁটু পরিমাণ পানি ও কাঁদার মধ্যে দিয়ে স্কুলে যেতাম। ওখানে পঞ্চম শ্রেণি ও ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করি। পরে বাড়ির পাসে আমার বাবা গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে একটি হাইস্কুল তৈরি করেন। ওই স্কুলের নাম দেওয়া হয় হরিশ্চর উচ্চবিদ্যালয়। পরে ওই স্কুলে ১৯৪৭ সালে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। ওই স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে এসএসসি পাস করি। ১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ হয় তখন দেখেছিলাম মানুষ আল্লাহু আকবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে স্লোগান দিত। তবে অনেক মানুষ দেশ ভাগের পর এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। এতে অনেকের মধ্যে হাহাকার দেখেছি। আবার কেউ কেউ আনন্দ উল্লাশ প্রকাশ করছে। আমাদের মুসলমানরা পাকিস্তানের সঙ্গে একসাথ হওয়ায় সবাই খুশি হয়েছিল।
এনটিভি অনলাইন : আপনার স্কুলের স্মরণীয় ঘটনা কী?
আবদুল বাসেত মজুমদার : নোয়াখালীতে রায়টের (হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা)সময় মাহাত্মাগান্ধী আসছেন শুনছি। মজার বিষয় হচ্ছে ছোট বেলা সবাইর সঙ্গে গান্ধীকে দেখার জন্য গেলাম ঠিকই কিন্তু গান্ধী কি জিনিস তা জানতাম না। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম গান্ধী মানি গান্ধী পোকা!! কিন্তু শিক্ষকরা যখন দেখালেন এরপর থেকে তাকে বুঝতে শুরু করলাম। তখন আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা সকল ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে লাকসাম ট্রেন স্ট্রেশনে গান্ধীকে দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। আমার মনে আছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে আমি দেখতে পাচ্ছি না। গান্ধী যখন স্টেশনে আসলেন তখন আমার শিক্ষক আমাকে তাঁর কাঁধের ওপর নিয়ে আমাকে দেখালেন। আমি এক নজর দেখলাম গান্ধী ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত নেড়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। দেখে ভাবলাম এই সেই ব্যক্তি যার জন্য হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে। আমার ওই চিত্র এখনো চোখের সামনে ভাসে। মজার বিষয় হলো ওই হুবহু চিত্র প্রায় ৬৫-৭০ বছর পর যখন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনী কাজে নোয়াখালী সফর করলাম। পরে সেখানে গান্ধী আশ্রম দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমি ট্রেনের জানালা দিয়ে গান্ধীর যে ছবি দেখেছি ঠিক হুবহু সেই ছবি তার আশ্রমে ঝুলছে! আমি আরো অভির্ভূত হলাম। এটি আমার জীবনের চিরস্মরণীয় দিন।
এনটিভি অনলাইন : কলেজ জীবন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ১৯৫২ সালে হরিশ্চর স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পাস করলাম। বাবার ইচ্ছে ছিল আমি যেন এম.এ পাস করি। কারণ আমার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ স্যার। যিনি পরে একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তার বাড়ি আমার বাড়ির পাসে ছিল। তিনি ছিলেন গরিব পরিবারের সন্তান। আমার বাবার সহযোগিতায় তিনি এমএ পাস করেন। এ জন্য আমার বাবা বলতো এই ব্যক্তি এত গরিব হয়েও এমএ পাস করেছে। আর তোমার টাকার অভাব নেই। তারপরও তুমি যদি এমএ পাস না করো আমার খারাপ লাগবে। কিন্তু আমি তো বাবার টাকাপয়সা নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। পড়া লেখায় মন বসাতে পারতাম না।
এরপর ১৯৫২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হলাম। একবার মানবিক বিভাগ আরেকবার বিজ্ঞান বিভাগে এভাবে করে আমার এক বছর সময় শেষ হয়ে যায়। কারণ পড়ালেখায় মনোযোগ ছিলাম না। বাবার টাকা নিয়ে লালামাই পাহাড়ে মামাতো ভাইদের নিয়ে আড্ডা দিতাম। সেই পাহাড়ে অনেক বানর ছিল; ওই সব বানরর ধরতাম দুষ্টুমি করতাম। এভাবে শিক্ষা জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করেছি।
পরে ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এইচএসসি পাস করলাম। কারণ দুইবার অকৃতকার্য হয়ে পরের বার পাস করলাম। পরে একই সালে ওই কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হলাম। এবং ১৯৫৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পাস করি। এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ পাস করি। ১৯৬২ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এলএলবি পাস করি। আসলে শিক্ষা সম্পর্কে অনুপ্রেরণা জাগানোর মতো আমার পিছনে কোনো ব্যক্তি ছিল না। জীবনের এ পর্যায়ে আসতে পারব- এটা স্বপ্নও দেখিনি!
এনটিভি অনলাইন : প্রথম ঢাকায় আসলেন কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমার বাড়ির পাসের একবন্ধু বলল সে ঢাকায় যাবে। আমিও তার সাথে ঢাকায় চলে আসি। কিন্তু কোথায় উঠব তা জানি না। আমার ওই বন্ধু বলল ঢাকায় বনগ্রাম (নারিন্দা) এলাকার একটি বাড়িতে উঠি। আমরা ওই বাড়ির একটি ছোট্ট ঘরে ঘুমাতাম। খাইতাম। এভাবে তিনদিন চলল। চারদিনের মাথায় আমাদের ওই বাড়িওয়ালা বের করে দিলেন। বললেন তোমরা এতদিন হয়ে গেল যাও না কেন? পরে তিনি আমাদের বের করে দিলেন। পরে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। বাড়িতে চলে গেলাম। পরে বাবা শুনে আমাদের বাড়ির পাসের আলী আহমদ স্যারকে জানালে তিনি বর্তমান স্বামীবাগ এলাকায় ওনার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
এনটিভি অনলাইন : আইন পেশায় এলেন কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমি ছিলাম বাবার বড় আদরের। বাবা-মায়ের পাঁচ মেয়ের পরে আমার জন্ম। এ কারণে পরিবারে আমার অবস্থান ছিল ভালোবাসার। আমার কোনো কিছুতেই বাবা 'না' করতেন না। মা-ও প্রায় অনুরূপ। তবে আমার প্রতি বাবার ভালোবাসাই ছিল বেশি। তার ইচ্ছাতেই আমি ল'ইয়ার হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করার পর আমি চাকরি করার চিন্তা করি। কারণ বাবা বয়স্ক হয়ে গেলেন। উনার আর্থিক অবস্থাও দিন দিন খারাপ হতে লাগল। পরে অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল অব বাংলাদেশ (এজিবিতে)আবেদন করলাম। কোনো প্রকার ইন্টারভিউ ছাড়া চাকরি হয়ে গেল। ১৯৬৩ সালে আমি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল অব বাংলাদেশে (এজিবি) চাকরিতে যোগদান করি। একদিন অফিস করলাম। পরে আমার বাবা খবরটা শুনে একদিন খুব ভোরে ঢাকায় আসলেন। দেখলাম তার মুখ বেশ ভার। বেশ মন খারাপ। বললাম, কী হয়েছে? মায়ের অসুখ হয়েছে?। তিনি কথা বললেন না। পরে তিনি বললেন, তোমাকে ঢাকায় পাঠিয়েছি উকিল হওয়ার জন্য। কেরানি হওয়ার জন্য নয়। আমার কি টাকার অভাব?
মূলত আইন পেশার প্রতি সমাজের মানুষের সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তিনি আমাকে একজন আইনজীবী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। এরপর ওই দিনের পর আমি আর সেই চাকরিতে যাইনি। এটি আমার জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। পরে অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম সাহেবের চেম্বারে জুনিয়র হিসেবে যোগ দেই। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। সেখানেই কাজ করতে থাকি।
এনটিভি অনলাইন : পারিবারিক জীবন শুরু করেন কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ১৯৬৫ সালে আইনজীবী হিসেবে সিনিয়রের সঙ্গে কাজ করাকালীন আমার সিনিয়র আব্দুস সালামের স্ত্রীর বোনের মেয়ে রওশন জাহান মেহেরুন নেসার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ওই সময়টা বিয়ে নিয়ে তখন চিন্তাও করিনি। কারণ পকেটে টাকা নেই,ঢাকায় নিজের থাকার জায়গা নেই। মাঝেমধ্যে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। ওই সময় নিজের কোনো বাসা ছিল না। সূত্রাপুরে একবন্ধুর মেসে তার সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতাম। এ অবস্থায় বিয়ে! কিন্তু আমার সিনিয়র ছিলেন নিঃসন্তান। তাঁর স্ত্রী আমাকে নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। পরে তার বোনের মেয়ের আমার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করলেন। আমি জানতাম না।
আইনজীবী সালাম সাহেব একদিন আমাকে ডেকে বললেন, তোমার বাড়ির ঠিকানাটা দাও। আমি ঠিকানা দিলে তিনি আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়িঘর বংশ মর্যাদা দেখে পছন্দ করলেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে আমার বাবাকে বললেন, আপনার ছেলের সঙ্গে আমাদের একটি মেয়ের বিয়ে দিতে চাই। আপনি কি বলেন? জবাবে বাবাও রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু আমি তখনো মেয়ে দেখিনি। একদিন চিন্তা করলাম কি রকম মেয়ে বিয়ে করছি। কি অবস্থা একটু দেখা দরকার। পরে দেখে পছন্দ-অপছন্দ দুটোই হলো। কিন্তু চিন্তা করতে ছিলাম এ অবস্থায় বিয়ে করব কি না। পরে আমার এক বন্ধু আবদুল মালেকের পরামর্শে রাজি হলাম। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে আমাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর ঢাকায় আনতে পারতাম না। আমি সুত্রাপুরে এক বন্ধুর মেসে ভাগাভাগি করে থাকতাম।
আমার আর্থিক ভঙ্গুরদশা সত্ত্বেও আমার শ্বশুরপক্ষ আমার কাছে বিয়ে দেওয়ার পিছনে কারণ ছিল আমি অভাব-অনটন সত্ত্বেও দিনরাত মামলার কাজ করতাম। সিনিয়র আমাকে কী টাকা দিল সেটা নিয়ে ভাবতাম না। আমার এ ধৈর্য দেখে আমার সিনিয়র মুগ্ধ ছিলেন। তিনি বলতেন তুমি অনেক বড় আইনজীবী হবে।
পরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত হয়ে ১৯৬৬ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। এই সময়টা আমার জীবনে অনেক কঠিন সময় ছিল। ওই সময়টা তেমন আয় ছিল না। তবে ব্যয় ছিল। আবার বাবার কাছেও টাকা চাইতে পারতাম না। আত্মসম্মানে বাঁধে। সব মিলিয়ে বড় কঠিনভাবেই পার করলাম এই সময়টা। আর্থিক অনটন ও দারিদ্র্যের সঙ্গে কাটালাম সেই দিনগুলো। তবে জীবনে পালাবার পথ খুঁজিনি। ওই সময় বাবার ব্যবসা ভালো ছিল না। উনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেন। তার ওপর ছয়টি বোনসহ অনেক বড় পরিবার ছিল। পরিবারেও কিছুটা অভাব অনটন চলছিল। বাবা মাঝে মধ্যে আকারে ইঙ্গিতে সংসারে টাকা পাঠানোর কথা বলতেন। কিন্তু টাকা দিতে পারতাম না বিধায় বাড়িতে যেতাম না। বউ থাকত তাঁর বাবার বাড়িতে। মাঝেমধ্যে আমি বেড়াতে যেতাম। অথবা বাড়িতে যাওয়ার সময় নিয়ে যেতাম। আবার ঢাকা আসার সময় তাঁর বাবার বাড়িতে রেখে আসতাম। এভাবে চলছিল। পরে আস্তে আস্তে কিছুটা আয় বাড়তে থাকে। ১৯৭১ সালে তাঁতীবাজার এলকায় ৩০০ টাকা দিয়ে বাসা বাড়ি নিলাম।
মুলত : সিনিয়রের বাড়িতে অর্থাৎ খালু শ্বশুরের বাড়িতে ভাড়া নিলাম। বউকে নিয়ে উঠলাম এ বাসায়। সালাম সাহেব মূলত বাবার আইনজীবী ছিলেন। যে মহুরি বাবার মামলা সালাম সাহেবকে দিতেন সে মহুরি আমাকে সালাম সাহেবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তাঁর সঙ্গে কাজ শুরু করি।
এনটিভি অনলাইন : আইনজীবী হিসেবে প্রথম মামলা কোনটি ছিল?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ১৯৬৬ সালে একটি লোক তার মামলা চলাকালীন অবস্থায় মারা গেছে। তার ওয়ারিশকে মামলার অন্তর্ভুক্তি করা ছিল আমার আবেদন। তখন হাইকোর্টে বিচারপতি ছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরী। প্রথম দিন ভয়ে ভয়ে আদালতে উপস্থাপন করলাম। আদালত আমার আবেদন গ্রহণ করলেন। আমিও সাহস পেলাম। আস্তে আস্তে শুরু হয় মামলা পরিচালনার কাজ।
তবে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করি অনেক পরে। সিনিয়র আইনজীবী সালাম সাহেবের সঙ্গে কাজ করার সময় কোনোদিন ৫টাকা কোনোদিন ৮টাকা করে দিতেন। আস্তে আস্তে ১৫ টাকা ২০ টাকা করেও দেওয়া শুরু করেন। ওই সময় চালের মণ ছিল ৪০ টাকা। পরে ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ১৯৬৯ সালে সহসম্পাদক নির্বাচিত হলাম। তবে ওই বছরটা আমার জীবনের অনেক খারাপ সময় যায়। কারণ ওই বছর আমার বাবা মারা যান। তখন নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হলো। কারণ যে বাবা আমার জন্য এত কষ্ট করল। সে বাবা আজ দুনিয়াতে নেই্। বাবা চাইতেন মাঝে মধ্যে কিছু টাকা দেই। কিন্তু আমার সামর্থ্য ছিল না। এই দুঃখে বাবার সামনে যেতাম না। তবে একটা সময় সদরঘাট থেকে একবার একটা পায়জামা ও পাঞ্জাবি নিলাম। উনি খুশিতে এটা পরে আমার নানার বাড়িতে গেলেন। একদিন শুনলাম বাবা অসুস্থ, বাড়িতে চলে গেলাম। পরে বাবা আমার হাতে পানি খেয়ে মধ্য রাতে একটু তাকালেন আমার দিকে। এরপর বাবা মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়লেন। তখন মনে পড়ে বাবা কি জিনিস ছিলেন। আমি যখন কলেজে পড়তাম। দেখতাম বাবা সকালে এসে হাজির হয়ে যেতেন। তখন বাবাকে বললাম। আপনি এত ভোরে? তিনি বলতেন তোমাকে দেখতে আসলাম। তিনি আমাকে বলতেন তুমি চিঠি লেখ না কেন? আমি বলতাম চিঠি না লিখলে বুঝবেন আমার কাছে টাকা আছে; আমি ভালো আছি। তিনি বলতেন শুধু টাকার জন্য চিঠি লিখবা। আসলে বাবা এত আদর করতেন। সেটার মর্মে বুঝতে পারতাম না। পরে নিজেই যখন বাবা হলাম তখন বুঝলাম বাবার ভালোবাসা সন্তানের জন্য কেমন?
এনটিভি অনলাইন : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম পরিচয় কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আসলে ছাত্র অবস্থায় ছাত্র অন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃত্ত ছিলাম। কিন্তু পরবর্তী জীবনে আইন পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ডিগ্রি পড়া অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচিত হই। উনি তখন কমিল্লার বুড়িচং থানার একটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় গিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে আমীর হোসেনের পক্ষে প্রচারণায় গিয়েছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগের কুমিল্লা জেলার সভাপতি আহমদ আলী সাহেবের বাসায় উঠলেন। সেখানে পরিচয় হলো। সেখানে দেখলাম বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব। তাঁর কথা-বার্তা চলাফেরা দেখে মুগ্ধ হতাম। তবে তখনো আমি সরাসরি রাজনীতি করিনি। ১৯৮১ সালের পর যখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হলাম তখন থেকে রাজনীতি শুরু করি।
এনটিভি অনলাইন : মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ১৯৭১ সালের দিকে মালিটোলা একটা জাগায় বাসা ভাড়া নিলাম। মালিটোলা আমার বাসার কাছে ২৬ মার্চ হঠাৎ বিকেলে দেখি চতুর্দিকে কেমন অস্থির পরিস্থিতি। সবাই কেমন যেন শুধু পালানোর জন্য ব্যস্ত। আমি রাস্তা থেকে দ্রুত বাসায় উঠলাম। বউকে বললাম সব জায়গায় যেন কেমন গম্ভীর ভাব। রাতের বেলায় ঘুমাতে যাব এমন অবস্থায় হৈচৈ আর চিৎকার শুনে বের হলাম। তাঁতী বাজার,বংশাল এলাকায় দেখলাম হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার। আর জীবন্ত দগ্ধ মানুষের আহাজারি। আমি যে বাড়িতে ছিলাম তা ছিল অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জোবাইদ আলী ভূঁইয়ার বাড়ি। ওই বাড়িতে মিলিটারিরা খোঁজ নিতে এসেছিল। যখন বাড়ির সামেন নেমপ্লেইটে অবসরপ্রাপ্ত সেনা-কর্মকর্তার বাড়ি লেখা দেখল; তখন পাক আর্মিরা আর ওই বাড়িতে হামলা করেনি। পরের দিন সকালে তাঁতী বাজার এলাকা থেকে খালু শ্বশুর আমার সিনিয়র সালাম সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠলাম। তখন আমার এক ছেলে এক মেয়ে ছিল। যাওয়ার পথে সকালে ৮-১০টা লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। তাঁতী বাজার এলকায় এক ব্যক্তিকে দেখলাম হঠাৎ আমার কাছে একটি কাপড়ের পোটলা নিয়ে হাজির। আমি জিজ্ঞাসা করতেই বলল স্বর্ণ-অলংকার আছে এখানে।
কোথায় পেয়েছ জিজ্ঞাসা করতেই বলল; আমি একটি হিন্দু বাড়িতে কাজ করতাম। তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। ঘরের একটি রুমে দেখলাম নিচের দিকের একটি ইট উঠানো অবস্থায় রয়েছে। পরে ইটটি উঠানোর পর মাটির নিচে এ পোটলাটি দেখলাম। আমি ও আমার সঙ্গে থাকা আরো একজন মিলে নিয়ে আসলাম। এখন রাখার জায়গা নেই। আপনার কাছে রেখে গেলাম। পরে এসে আমরা নিয়ে যাব। পরে এসে নিয়ে গেল। কিছুদিন পরে এসে বলল, স্যার ওই পোটলাটি আমার সঙ্গে থাকা লোক নিয়ে যেতে চাইল। পরে আমি তাকে গুলি করে মেরে ফেললাম। এভাবে দেখলাম গণহারে লুটতরাজ চলছে।
পরে তাঁতীবাজার এলাকা থেকে এ কে এম ফজলুল হক সাহেবের বাড়ির পিছনে এক আইনজীবীর বাড়িতে উঠলাম। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র নিজের চোখে দেখেছি। কিন্তু আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করিনি। যুদ্ধকালীন বাড়িতে থাকাটাও নিরাপদ মনে করিনি। কারণ বাড়ির পাশে লাকসাম রেললাইন মুক্তিযোদ্ধারা বোমা মেরে উল্টিয়ে দিত। তখন পাক আর্মিরা আরো কঠোর ভাবে রেললাইন এলাকার বাড়িগুলোতে এসে হামলা করত। এ কারণে বাড়ি থাকা হতো না। এভাবে ঢাকা-বাড়ি মিলে মুক্তিযুদ্ধের সময় পার করলাম।
যুদ্ধ একসময় শেষ হলো। কিন্তু এর পরের অবস্থাতো আরো করুণ। ঢাকাসহ অনেক জায়গায় যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী ছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধারা যখন দেখল যেসব রাজাকারের কারণে যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশীয় সেসব শান্তিবাহিনী, রাজাকারদের ধরে ধরে হত্যা করা হলো। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এ ঘটনা ঘটে। যারা আল-বদর শান্তি বাহিনীর লোক ছিল তাদের এভাবে হত্যা করা হয়। আত্মীয়স্বজনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এনটিভি অনলাইন : আইন পেশায় দ্রুত উন্নতি করলেন কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত হয়নি। বাবার আদেশ ছিল তোমাকে আইনজীবী হতে হবে। এ কারণে আমি শুধুমাত্র আইন পেশা নিয়ে ছিলাম। তবে ১৯৭২ সালে আমার আইন পেশায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়। আমার সিনিয়র সালাম সাহেবের সঙ্গে কাজ করার সময় অত্যন্ত দক্ষতার কাজ করতাম। এ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন নামকরা আইনজীবী ব্যারিস্টার শওকত আলী খানের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ১৯৭৩ সালের দিকে তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমার জুনিয়র হিসেবে যোগ দাও। পরে উনার সঙ্গে যোগ দিলাম। উনি আমাকে হ্যান্ডসাম ফি দিতেন। এভাবে তার সঙ্গে কাজ শুরু করি। উনি মূলত অপরাধ বিষয়ক মামলা বেশি করতেন।
এনটিভি অনলাইন : আদালতে এত মনোমুগ্ধকর শুনানি করেন কীভাবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ফৌজদারি মামলায় মূলত অনেক মজার ঘটনা থাকে। আমার সিনিয়র ছিলেন ফৌজদারি মামলা বিশেষজ্ঞ। আমি মূলত তাঁর কাছ থেকে শুনে এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে আদালতে সুন্দর করে ঘটনা উপস্থাপন করি। তবে অনেক কিছু আমি মীরাক্কেল ভাবে তাৎক্ষণিক শুনানিকালে বলতে পারি। কীভাবে তখন মাথায় আসে আমি নিজেও জানি না। আমার সুন্দর উপস্থাপনাকে আদালত আগে থেকেই প্রশংসা করতেন। এভাবে আদালতে আমার আস্থা তৈরি করলাম।
এনটিভি অনলাইন : আদালতে শুনানিকালে মজার কিছু শুনানি যদি বলতেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : অনেক মজার ঘটনা আছে। সবগুলোতে মনে নেই। কুমিল্লার একটি মামলার কথা বলি;একটি ছেলে তার মামার বাড়িতে বেড়াতে গেল। রাতের বেলায় পুলিশ এসে তাকে এবং তার মামতো ভাইকে ধরে নিয়ে গেল। পরে অস্ত্র আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। কিছুদিন পর দেখা গেল মামলার অভিযোগপত্রে মামাতো ভাইয়ের নাম নেই। পরে মামাতো ভাই খালাস পায়। কিন্তু ওই ছেলেকে ছাড়া হয়নি। বরং তাকে সাজা দেওয়া হয়। আমি আদালতকে বললাম; মাই লর্ড মা ছেলেকে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে বলল, আমরা তো দুঃখে কষ্টে আছি। তোর মামাকে বলিস আমাদের অংশীদার থেকে কিছু টাকা দিতে। কিন্তু মামা টাকা দিতে অস্বীকার করায় ছেলে মায়ের উত্তরাধিকার দাবি করল।
এ অবস্থায় মামা পুলিশকে টাকা দিয়ে এ নাটক সাজিয়ে তাকে অস্ত্র আইনে চালান করে দেয়। কারণ ছেলেকে ধরা হলো নানার বাড়িতে মামার ঘরে মামাতো ভাইসহ। মামাতো ভাইকে খালাস দিলেন। কিন্তু ছেলেকে অভিযোগপত্রের মধ্যে নাম দিয়ে সাজা দেওয়া হলো। কারণ ভাগিনা পরে মামাকে বলল ঠিক আছে সম্পত্তির দরকার নেই। তোমরা আমাদের অংশও খাও। বিজ্ঞ আদালত মামা সম্পত্তি ফেরৎ না দেওয়ার জন্য শুধু এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। এসব ঘটনাকে আদালতে আমি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতাম। আদালত জিজ্ঞাসা করলেন এসব ঘটনার বিষয়ে আপনার লিখিত আবেদনে আছে কি? আমি বললাম লেখা নেই। যখন আপনার সামনে কোর্টে দাঁড়ালাম তখন মাথায় চলে আসে। মেহেরবাণী করে ছেলেকে খালাস দেন। এটিই আসল ঘটনা। পরে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে খালাস দিলেন। আমি আসলে মীরাক্কেল ভাবে এ ঘটনা আদালতের সামনে উপস্থাপন করি। আমি নিজেও জানি না আাদলতে যখন কথা বলতে যাই মীরাক্কেলভাবে মাথায় কীভাবে চলে আসে।
মজার ঘটনা-২ : একবার এক পুলিশ অফিসার। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পায় না। মাঝখানে একলোকের সঙ্গে দেখা হলে বলল ঠিক আছে তোমার কি সার্টিফিকেট আছে নিয়ে আস। পরে ওই পুলিশ লোকটি বলল আমার এই সার্টিফিকেট আছে। ওই লোক বলল আরো কিছু সার্টিফিকেট লাগবে। পরে লোকটি বলল, এখন কী করব? লোকটি বললো কিছু টাকা খরচ করতে হবে। বলল কত টাকা? বলল ৫০ হাজার টাকা। পরে অনেক কষ্ট করে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেটসহ ও পুলিশে চাকরি হয়।
কিছুদিন চাকরি করার পর জানতে পারে তাঁর সার্টিফিকেটটা জাল। জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়ার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলো। তাকে জেলে পাঠানো হলো। এ মামলাটি আদালতে উপস্থাপানের পর মামলার সব ঘটনা বললাম। কিন্তু আদালত কিছুতেই জামিন দিতে রাজি হয় না। পরে আদালতকে বললাম লোকটা কত কষ্ট করে টাকা জোগার করে চাকরি নিল। সার্টিফিকেট সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। তাঁর চাকরিটাও গেল। টাকাও গেল। মাই লর্ড আমাদের দেশে একটি প্রবাদ আছে, আমও গেল ছালাও গেল। গেল গেল সবই গেল। এ নিরীহ নিষ্পাপ লোকটাকে জেলে রেখে আদালতের কী লাভ হবে? পরে দেখি আদালত তাকে খালাসই করেদিল। আসলে সত্য কথা হলো এ ধরনের কথা মীরাক্কেলভাবে চলে আসে। কোর্ট জানে আমি কোর্টের সময় নষ্ট করি না। মিথ্যা কথা বলি না। আমি মক্কেলের পক্ষে প্রথমে কথা বলি। এভাবে হাজার হাজার মামলা জয়লাভ করি। আমি কখনো কোনো মক্কেল কত টাকা দিল আর দিল না তা হিসাব করিনি।
মজার ঘটনা-৩ : নারায়ণগঞ্জ এলাকায় রাজধানীর এক ডাক্তার ফেনসিডিল নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করার সময় পুলিশ অটক করল। পরে পুলিশ মামলায় কত বোতল পেন্সিডিল তা উল্লেখ করেনি। আমি জামিনের শুনানিতে বললাম বিজ্ঞ আাদলত ডা. সাহেব নিজেই একজন সচেতন মানুষ। তিনি ফেন্সিডিল ব্যবসা করতে যাবেন কেন? উনার কাশির সমস্যা তাই উনি এক বোতল ফেন্সিডিল কিনেছেন। তাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে, ওই ডা. একজন মাদকাসক্ত। এখনো কারাগারে তাকে ফেনসিডিল খাওয়ানো হয়। তাঁর কারণে কারাগারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় আমি পাল্টা যুক্তি দিয়ে বললাম মাই লর্ড আমরা জামিন পেলে ওই ডাক্তারের চিকিৎসা করাব। ওই জন্য তাকে জামিন দেওয়া উচিত। অন্যথায় তার কারণে কারাগারের পরিবেশ নষ্ট হবে। অন্য আসামীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদালত আমার যুক্তিটি আমলে নিয়ে তাকে জামিন প্রদান করে। আসলে মীরাক্কেল ভাবে অনেক কথা মাথায় চলে আসে ।
মজার ঘটনা-৪ :
চট্টগ্রামে এক পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ওই পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলরকে ধর্ষণ করেছেন। পরে ওই মামলায় আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আসে। আমি দেখলাম আসামির বয়স ৮২ বছর। আর অভিযোগকারি মহিলার বয়স ৫২ বছর। পরে আাদলতকে বললাম রাজননৈতিক কারণে বিরোধিতা করার জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করো হয়েছে। এ মেয়রকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তাহলে তার বিরোধীপক্ষ মেয়র পদে বসতে পারে। এ জন্যই মূলত এ মামলার অবতারণা করা হয়েছে। কিন্তু আদালত এ যুক্তি গ্রহণ করল না। পরে আদালতকে বললাম; মহিলারা সাধারণত ৪০ বছর পার হলেই তাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলে। এই বৃদ্ধ বয়সে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে কীভাবে? তা ছাড়া আসামীর বয়স ৮২ বছর। তার কিছু আছে বলে তো আমার মনে হয় না! আদালত বলল; আমাদের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ৮৭ বছরে ও অনেক কিছু করছেন। তখন আমি বললাম মাই লর্ড জামিন আপনাকে দিতে হবে। কারণ চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ তারা মহিলার চেয়ে তরুণ ছেলেদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট!!! এ ধর্ষণের ঘটনা যদি সত্যিই হয় তাহলে তো বলা যায় অন্তত তারা সঠিক পথে ফিরে আসছে!! পরে আদালত জামিন দিয়ে দিল। এভাবে মিরাক্কেলভাবে অনেক কিছুই অবতারণা করি।
এনটিভি অনলাইন : আইন পেশায় ও দেশ সেবায় আপনার অবদান?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আসলে মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। বিচারপ্রার্থীরা যদি আইন অঙ্গনে আসতে না পারেন, আইনজীবীরা যদি তাদের পাসে দাঁড়াতে না পারেন, তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে কীভাবে? তাই একটি মামলায় শুনানি করে করিয়ে আমার জুনিয়র আমাকে কত টাকা দিল তা কখনো গুনেও দেখিনি।
আইনজীবীদের সবার আর্থিক সঙ্গতি সমান নয় তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে সারা দেশে আইনজীবী সমিতির জন্য ট্রাস্ট গঠন করেন। গত কয়েক বছরে দেশের ৪৮টি আইনজীবী সমিতিতে দুই লাখ করে টাকা দিয়েছেন। এর লভ্যাংশ থেকে আইনজীবীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতিতে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। সাধ্যমতো সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। ৫০ বছরের ওকালতি জীবনে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে এভাবে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এখনো এই বয়সেও এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর মতে, দুস্থ, অসহায় বিচারপ্রার্থীর জন্য আমার মন কাঁদে। তাদের জন্য সব সময় কিছু করার চেষ্টায় থাকি।
একবার পঞ্চগড় যাওয়ার সময় পথিমধ্যে রাতে আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। কোথায় থাকব, কী খাব, কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। হঠাৎ চায়ের দোকান থেকে এক লোক এসে বলল, স্যার, আমি আপনাকে চিনি। আমি আপনার ক্লায়েন্ট। আপনি আমার মামলা করেছিলেন। টাকা নেননি। সেই লোক পরে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে। এভাবে যেখানেই গিয়েছি মানুষের চোখেমুখে কৃতজ্ঞতা দেখেছি। আমার নামে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার আন্ধারিয়াপাড়ায় আবদুল বাসেত মজুমদার মাদ্রাসা ও এতিমখানা আছে। এটি আমার কিছু ক্লায়েন্টই তৈরি করেছেন। আমার গ্রামের বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে। আমার ছোট মেয়ে ও জামাই দেখাশোনা করে। এখন একটি ফাউন্ডেশন করার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে,আইনজীবীরা শুধু নিতেই জানে, দিতে জানে না। আমি এই ধারণা বদলে দিতে চাই। আমার গ্রামের বাড়িতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে।
এনটিভি অনলাইন : মামলায় হারার পর আপনার অনুভূতি কেমন হয়?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমি চিন্তা করি আমি মামলায় হারতেও পারি,জিততেও পারি। তবে আমার মক্কেল যেন বুঝতে পারে,আমি তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এবং মামলা হারার পেছনে আমার কোনো দুর্বলতা বা চেষ্টার ঘাটতি ছিল না। মামলার মেরিটের অভাবেই সে হেরেছে- এটা যেন মক্কেল বুঝতে পারে।
এ ছাড়া মামলা গ্রহণের সময় আমি কখনো বলিনি, তোমার মামলা আমি জিতিয়ে দেব। বলেছি, চেষ্টা করব। তবে মামলায় হারার পর আমারও খারাপ লাগে। লোকটা এত টাকা খরচ করল।
এনটিভি অনলাইন : বিচার বিভাগে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমার আইন পেশার জীবনে আমার আদর্শ হলেন আমার সিনিয়র আবদুস সালাম সাহেব। তিনি টাকার হিসাব রাখতেন। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কত টাকা নিলেন তার হিসাব রাখতেন। বেশি টাকা নেওয়া হলে মামলা শেষে তা ফেরত দিতেন। এখন অনেক আইনজীবীর মধ্যেই এটি দেখি না। তার এ গুণটি আমি ধরে রেখেছি। আমিও একটি মামলা আসলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে চুক্তি করি। তোমার মামলায় আমাকে এত টাকা দিতে হবে। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সে আমাকে বিভিন্ন সময় টাকা দেয়। আমি সব টাকার হিসাব রাখি। মামলা শেষে যদি দেখি চুক্তির চেয়ে টাকা বেশি নিয়েছি,বাকি টাকা তখন ফেরত দেই। এটি শিখেছি আমার সিনিয়রের কাছ থেকে। এভাবে চলার কারণেই আজ আমার এ অবস্থা।
এনটিভি অনলাইন : ভালো আইনজীবী হতে হলে করণীয় কী?
আবদুল বাসেত মজুমদার : সিনিয়রের পেছনে সময় দিতে হবে। কম্পিউটারকে সিনিয়র বানিও না। সিনিয়রের কাছ থেকে কাজ শিখে নাও। এখনই 'বড়' হইও না। 'বড়' একদিন হওয়া যাবে। তার জন্য সাধনা কর। সাফল্য একদিনে ধরা দেয় না। বড় হওয়ার জন্য শর্টকাটের কোনো পথ নেই। এ পথ বন্ধুর। মক্কেলের আস্থা অর্জন কর। নিজের ভেতরে দায়িত্ববোধ তৈরি কর।
এনটিভি অনলাইন : বিচার বিভাগ পৃথক হলো কিন্তু স্বাধীন হয়েছে কী?
আবদুল বাসেত মজুমদার : বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জীবনের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। কারণ বিচার বিভাগ যে স্বাধীন সেটার স্বাদ তারা পাচ্ছে না। কারণ সরকার এখনো কিছু ক্ষমতা হাতে রেখে দিয়েছে। এ জন্য আদালতে আমি মনে করি নিম্ন আদালত বিচার বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা উচিত। কিন্তু এখন এখনো হয়নি; অবশ্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একদিনে এসব করলে কিছু অসুবিধাও আছে। কারণ এটি চলমান প্রক্রিয়া। কারণ আমাদের দেশের মানুষ চিন্তা চেতনায় এখনো সভ্য হয়ে ওঠেনি।
আপনি জানেন ভারতেও বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে। কিন্তু এখনো কিছু কিছু জিনিষ সরকারের হাতে রয়ে গেছে। আমি মনে করি বর্তমান সরকার আদালতে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করছে না। বিচারবিভাগ চায় সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যেন জুডিশিয়ারির ক্ষমতা বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু সরকার তা করছে না। তাতেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কিছুটা টানাপড়েন চলছে। আইনজীবীদের নেতা হিসেবে আমি বলব বাইরে এভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না বলে বরং সরকার এবং প্রধান বিচারপতি বসে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করতে পারে। তাহলে বিষয়টি সুন্দর হয়। আমরা চাই না দ্বন্দ্ব বা টানাপড়েন সৃষ্টি হোক।
এনটিভি : জঙ্গি ইস্যুকে কীভাবে দেখছেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার: দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পার হলো। কিন্তু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যারা বিরোধিতা করে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে তারাই দেশকে অকার্যকর করতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে তারা খুব বেশি সফল হবে না। কারণ সরকার এটি খুব কঠোর হস্তে দমন করছে।
এনটিভি অনলাইন : ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে তা থেকে বাংলাদেশ কতটুক উপকৃত হবে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত কিছুই জানি না। তবে এমন কোনো চুক্তি করা উচিৎ হবে না; যা আমাদের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানে। এমন চুক্তি আমরা চাই না। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার নেত্রী এমন কোনো চুক্তি করেনি; করবেনও না।
এনটিভি অনলাইন : দেশে কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমি মনে করি গত ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা ছিল সংবিধান রক্ষা করার জন্য। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলছি না। ওটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়ওনি। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এ নির্বাচন হয়েছে। নেত্রীও উপলব্ধি করেন,এ নির্বাচন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনের আগে আরো একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া হবে বলে নেত্রী শেখ হাসিনা ও মনে করেন। আমার বিশ্বাস দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা করবেন। এবং বিরোধীদল ও অংশ নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করবেন।
এনটিভি অনলাইন : গুম ও খুন হচ্ছে এটিকে কীভাবে দেখছেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : আমাদের দেশের র্যাব সৃষ্টি করে বিএনপি আমল থেকে খুন ও গুম শুরু হয়। যে উদ্দেশ্যে র্যাব গঠন করা হয় র্যাব সে উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেনি। এ জন্য র্যাবের ক্ষমতাকে কমিয়ে সাধারণ বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য দেওয়া উচিত। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় প্রমাণিত হয় র্যাব যে অপকর্ম করেছে তা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। তাই তাদের ক্ষমতাকে সম্প্রসারণ না করে সংকুচিত করে সাধারণ বাহিনীর মার্যাদায় আনা হোক।
এনটিভি অনলাইন : ভবিষতে বাংলাদেশকে যে জায়গায় দেখতে চান?
আবদুল বাসেত মজুমদার : গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ আরো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী হবে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশ এগিয়ে যাবে এটাই আমার কামনা। সব বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এনটিভি অনলাইন : পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে যদি বলেন?
আবদুল বাসেত মজুমদার : ব্যক্তিগত জীবনে আমি অত্যন্ত সুখী একজন মানুষ। চার সন্তানের জনক। সিনিয়র আবদুস সালামের স্ত্রী আমাকে খুব পছন্দ করতেন। মূলত তার ইচ্ছায়ই বা তার মাধ্যমেই ১৯৬৫ সালের জুলাইয়ে তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করি। আমার স্ত্রী রওশন জাহান মেহেরুন্নেসা। ছেলে-গোলাম মহিউদ্দিন আবদুল কাদের ব্যবসা করে এবং সাঈদ আহমদ রাজা আইনজীবী। মেয়ে-ফাতেমা আক্তার লুনা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও খাদিজা আক্তার ঝুমা উত্তরা মেডিকেল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আবদুল বাসেত মজুমদার : আপনাদেরও ধন্যবাদ।