সীতাকুণ্ডে ‘অজ্ঞাত রোগ’ নির্ণয়ে কাজ শুরু
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দুর্গম গ্রামে নয়টি শিশু যে ‘অজ্ঞাত রোগে’ মারা গেছে, তা নির্ণয়ে কাজ শুরু করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রতিষ্ঠানের পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে কাজ শুরু করে। দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডা. ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া।
চিকিৎসক দল প্রাথমিকভাবে সেখানে চিকিৎসাধীন ৩১ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু করে এবং বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করে।
অসুস্থ শিশুদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক দল ঘটনাস্থল সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া মধ্য সোনাছড়ি পাহাড়ি এলাকার ত্রিপুরাপাড়ায় যাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন আজিজুল রহমান।
এদিকে চিকিৎসক দলের প্রধান ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন, অসুস্থ শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। এদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে পুষ্টিহীনতা কাজ করেছে। হাসপাতালে ভর্তির পর এরা ভালো আছে। এসব শিশুকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের ভালো খাবার দেওয়া হলে রোগমুক্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আক্রান্তদের মধ্যে ৩১ জন ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল এবং বাকি কয়েকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
ত্রিপুরাপাড়ায় সপ্তাহখানেক ধরে বেশ কিছু শিশু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। শিশুদের জ্বর, শরীর ব্যথা, রক্তপড়া, কাশিসহ শরীরের দেখা দিয়েছে নানা উপসর্গ। এর মধ্যে গতকাল বুধবার একদিনে মারা গেছে চার শিশু। এর আগে দুদিনে মারা যায় পাঁচজন। পরপর শিশু মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্ক শুরু হয়। তবে কী কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, তা কেউ বলতে পারছে না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে। ছোট্ট বাচ্চা থেকে ১০ বছরের মধ্যে, পাঁচ-ছয় বছরের বেশি। আপাতত দুই-চার দিন বা কয়দিন তাদের একটু আইসোলেশনে থাকার কথা বলা হয়েছে। আমরা আপাতত অজ্ঞাত রোগ হিসেবেই চালাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা. এস এম নুরুল করিম বলেন, ‘প্রথমে জ্বর আসে। জ্বর আসার পরে, দুই-তিন পরে বাচ্চার গায়ে র্যাশ ওঠে, লালচে দাগ। এরপর আস্তে আস্তে একটু শ্বাসকষ্ট, কাশি শুরু হয়। এরপর পায়খানা, সঙ্গে সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। নাক দিয়ে একটু রক্ত পড়তে পারে। আলটিমেটলি খিঁচুনি ও শ্বাসকষ্ট—এ দুইটা মিলে বাচ্চাগুলো মারা যাচ্ছে।
জানা গেছে, এলাকায় শিক্ষিত মানুষ কম। মানুষের মধ্যে নানা কুসংস্কার আছে। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্তের পর স্থানীয় লোকজন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে হোমিও চিকিৎসাসহ স্থানীয়ভাবে ঝাড়-ফুঁকে চিকিৎসা নিয়েছে।