'অপুষ্টির কারণে' সীতাকুণ্ডের ৯ শিশুর মৃত্যু
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় ৯ শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে অপুষ্টিকেই দায়ী করা হচ্ছে। অর্থাৎ অজ্ঞাত রোগ নয়, পুষ্টিহীনতাই ওই শিশুদের মৃত্যুর কারণ।
আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানান সরকারিভাবে রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে জড়িতরা।
গতকাল বুধবার থেকে সীতাকুণ্ডের বার আউলিয়া মধ্যম সোনাছড়ি পাহাড়ি এলাকার শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ‘অজ্ঞাত রোগ’ নির্ণয়ে কাজ শুরু করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। আজ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তারা। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, আক্রান্ত শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে।
গত চারদিনে ৯ শিশুর মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক শিশু রোগটিতে আক্রান্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। সরকারি উদ্যোগে আক্রান্ত এসব শিশুকে চট্টগ্রামে এনে ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২ শিশুর মধ্য দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩১ জন শিশুর শরীরের অবস্থা সন্তোষজনক।
এসব বিষয়ে আইসিডিডিআরবির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা.ফারুক আহমেদ ভুইয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পেরেছি মারাত্মক অপুষ্টির কারণেই। যেসব এলাকা থেকে রোগীগুলো এসেছে সেটা আসলে হার্ড টু রিচ এরিয়ার পাহাড়ি এলাকা। তারা ট্রাইবাল লোক। তারা অত্যন্ত লো সোশিও-ইকোনোমির লোক। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। মোটামুটি যে বাচ্চাগুলো এসেছে দেখলাম যে তাদের লক্ষণগুলো মোটামুটি একই রকম। অপুষ্টিতে ভুগছে। রক্তপরীক্ষাতেও দেখা গেছে যে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেছে। এবং অন্যান্য যে রক্তের যে ইলেকট্রোলাইটস যে পরীক্ষাতে এখন পর্যন্ত যেগুলি পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে যে অপুষ্টিতেই মোটামুটি আপাতত আমরা ধরে নিচ্ছি।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান জানান, শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টি বুঝতে পারার পর তাঁরা প্রথমেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য একজন পুষ্টিবিদকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি সোনাছড়ী এলাকায় থাকা অন্য শিশুদের জন্যও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। এটা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণেই এমনটা হয়েছে।
তবে আরো পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. এম এ ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকগুলো সংক্রমক রোগ আছে, ইনফেকশন আছে যেগুলো দ্রুত একজনের কাছ থেকে অন্যদের ছড়ায়। তার মধ্যে পাহাড়ি এলাকার মধ্যে এক ধরনের রোগ আছে, টাইফাস এক ধরনের রোগ আছে, মেনিনজাইটিসে হয় এমন একটা রোগ আছে যেটাকে মেনিগোকোকাল মেনিনজাইটিস বলে। হামও আছে। ট্রাইবাল পপুলেশন ওখানে উনাদের কী কী কর্মকাণ্ড আছে সেটা স্থানীয়ভাবে আরো পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে।’
সীতাকুণ্ডের বারআউলিয়া মধ্য সোনাছড়ি পাহাড়ি এলাকায় বাস করে শতাধিক ত্রিপুরা পরিবার। সপ্তাহখানেক ধরে এ এলাকার শিশুরা অজ্ঞাত রোগে ভুগছিল। এর মধ্যে শিশুদের জ্বর, শরীর ব্যথা, রক্তপড়া, কাশিসহ শরীরের দেখা দিয়েছে নানা উপসর্গ। এর মধ্যে গতকাল বুধবার একই দিনে মারা যায় চার শিশু। এর আগে দুদিনে মারা যায় পাঁচজন।