প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে আমি মনোনয়ন পাব : মনির
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর কাঁঠালিয়া) থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ছাত্রনেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির। গত উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে এবং ২০১৪ সালে তিনি মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমন প্রত্যাশা তাঁর। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোণীত প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। এনটিভি অনলাইনের একান্ত আলাপচারিতায় আগামী নির্বাচন ও তাঁর এলাকা ঝালকাঠি ১ আসনে নিজের অবস্থান নিয়ে কথা বলেন মনির। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট মুহম্মদ আকবর।
এনটিভি অনলাইন : দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছেন। এখন নির্বাচনে মনোনয়ন চাইছেন। কেন?
মনিরুজ্জামান মনির : প্রথমত আমি রাজনীতি করি অনেক ছোটবেলা থেকে। সেই স্কুল থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একটা মানুষ রাজনীতি করতে করতে প্রকৃত কর্মী হয়ে উঠে। তখন তাঁর মধ্যে কিছু আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয় মানুষের জন্য কিছু করার। মানুষের জন্য কিছু করতে হলে নেতৃত্বে আসা দরকার হয়ে পরে। মনোনয়ন পেয়ে ক্ষমতায় আসা দরকার হয়। সে কারণেই মনোনয়ন চাওয়া।
এনটিভি অনলাইন : আপনি কী এবারেই প্রথম মনোনয়ন চাচ্ছেন?
মনিরুজ্জামান মনির : মনোনয়ন ২০০৮ সালেই চেয়েছিলাম। ২০১৪ সালেও চেয়েছিলাম। কেন পাইনি সেটা আমার আজও জানা হলো না। আমার এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এবং আমার এলাকার নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করেছিল যে, আমি মনোনয়ন পাব। যাই হোক সবকিছুর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমার আস্থা আছে।
এনটিভি অনলাইন : আপনার এখানে একজন রাজনীতিবিদ আছেন উনাকে না দিয়ে আপনাকে মনোয়ন দেওয়া হবে সে বিশ্বাস কেন?
মনিরুজ্জামান মনির : আসলে একজন মনোনয়ন পেলে তো অন্যজন বাদ পরে। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে আমি সেখানে অনিবার্য বলে আমি মনে করি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে একজন জনপ্রিয় নেতার প্রয়োজন পরে। ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন ছিল না, দুর্বল নির্বাচন ছিল। সেটা এ কারণে বলছি যে, বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসেনি। যদি বিএনপি আসত আমার বিশ্বাস তাহলে আমি মনোনয়ন পেতাম। আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। সে কারণে প্রতিটা দলেই শক্তিশালী প্রার্থীর প্রয়োজন পড়বে। যারা জনগণের সঙ্গে আছে, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস যার প্রতি আছে তারাই প্রার্থী হবেন। সে কারণেই বলব সার্বিক বিবেচনায় আমি বর্তমানে আমার এলাকায় যে এমপি মহোদয় আছেন তাঁর থেকে এগিয়ে। দল আমাকেই মনোনয়ন দিবে এটা আমি বিশ্বাস করি। একটু বিষয় যোগ করি; পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আমার বাবা আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। আমি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে গুটি কয়েক ছাত্র নিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। ছাত্রলীগের হয়েই পরবর্তী সময়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি। আমাদের দল যখন ক্ষমতায় ছিল না তখনো আমি আমার এলাকার দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে আমি কথা বলেছি, কাজ করেছি। দল ক্ষমতায় আসার পর বেকারত্ব দূরীকরণ, চিকিৎসায় সহায়তা, দরিদ্র মানুষের আর্থিক ও মানসিক সহায়তা ইত্যাদি করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আমি আমার এলাকার মানুষকে এনে দিয়েছি। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি ঋণী যে আমি আমার এলাকার মানুষের জন্য চাওয়া মাত্রই তিনি দিয়েছেন। এত কিছুর জন্য আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে থেকেছি। সমাজকে আলোকিত করার জন্য যেসব দরকার সেসব কাজ আমি করেছি, করে চলেছি।
এনটিভি অনলাইন : আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের মাধ্যমে আপনি আশাবাদী ছিলেন যে, দলে প্রত্যাশিত একটি পদ পাবেন। তা হলো না। যদি মনোনয়নও না পান তাহলে কী দলের প্রতি অভিমান তৈরি হবে?
মনিরুজ্জামান মনির : প্রথমত বলি- আমি প্রচণ্ড রকম আশাবাদী একজন মানুষ। আমি যখন ২০১৪ সালে মনোনয়ন পাইনি তখন আমার এলাকার মানুষ অনেক কথা বলছিল। কিন্তু আমার বাবা আমাকে বললেন যে, তুমি যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বাস কর তাহলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকতে হবে। তিনি বলেছিলেন, এবার পাওনি কিন্তু বিশ্বাস রেখ আগামীবার পাবে। এই শিক্ষা আমার ভেতরে আছে। আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি বিভিন্ন সময় আমাকে অনেকে অনেক সময় অবদমন করার চেষ্টা করেছে, সেসবের মুখোমুখি হয়েছি। ফলে আমি বলব পরীক্ষিত। আমি কমিটিতে আসব এমন প্রত্যাশা আমি করেছিলাম, গণমাধ্যমের ভাইবোনেরা হয়তো মনে করেছিলেন যে আমি কমিটিতে আসব। কিন্তু আসিনি এর কারণ হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মনে করেছেন যে এবার নয় অন্যবার অন্যকোন জায়গায় আমাকে নিয়োজিত করবেন। সেজন্য আমার কোনো অভিমান নেই, শতভাগ আস্থা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আছে।
এনটিভি অনলাইন : অর্থাৎ আপনি বলতে চাচ্ছেন, যদি দল আপনাকে মনোনয়ন না দেয় তবুও আশাহত হবেন না, পরবর্তী নির্বাচনের আশায় থাকবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না?
মনিরুজ্জামান মনির : এইবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং সে কারণে দল আমাকে বিবেচনা করবে এটা আমি বিশ্বাস করি। দল তো নিশ্চই চাইবে না ফলাফলটা খারাপ হোক। এ জন্য বিজয়ী হতে কর্মীবান্ধব, ত্যাগী এবং জনমানুষের চিন্তা চেতনার সঙ্গে মিল রেখে যিনি চলতে পারেন তিনিই পাস করেন। এসব বিবেচনায় আনা হলে আমি সেখানে মনোয়ন পাব এবং বিজয়ী হয়ে আসব। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। কারণ শেখ হাসিনা শুধু আমার নেত্রী নন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই আমার অভিভাবক। তিনি আমার মা। আমার একটা ভাই অসুস্থ ছিল তখন তিনি নিজ দায়িত্বে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাঁর রেফারেন্সে আমার ভাই সিএমএইচে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিল। তা ছাড়া, কে নমিনেশন পাবে কে পাবে না এর বড় বিচারক জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি মনে করি না যে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে কখনো ভুল করেন।
এনটিভি অনলাইন : এবারের মনোনয়নে কি নেতাকর্মীরা তুষ্ট হবে বলে আপনি মনে করেন?
মনিরুজ্জামান মনির : এই কারণে হবে যে, বিগত দিনে যাঁরা মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছে। যারা তাদের ভাই, বোন, আত্মীয় স্বজনদের জায়গা দিয়ে ত্যাগী নেতাদের সরিয়েছেন সেই নেতাদের বিষয়ে আমাদের দল বিবেচনায় আনবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের দল সেভাবেই অগ্রসর হচ্ছে। ত্যাগ তিতিক্ষায় যাঁরা উত্তীর্ণ হবেন না তাঁরা এইবার বঞ্চিত হবেন।
এনটিভি অনলাইন : আপনি সংসদ সদস্য হলে এলাকার জন্য কী কী কাজ করবেন?
মনিরুজ্জামান মনির : আসলে আমি যে এলাকার সেখানে মিল-ইন্ড্রাস্টি হওয়ার সুযোগ নাই। আমি প্রথমেই শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই। সামাজিক কিছু অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানেরা বেড়ে উঠছে। দিনে দিনে মাদকের কারণে পুরো যুবসমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে বাবা-মা নিজে না খেয়ে সন্তানকে মানুষ করার জন্য টাকা দিচ্ছে, সেই সন্তান যখন পড়ালেখা না করে মাদক সেবন করে উল্টা মা-বাবার উপর অত্যাচার করছে। আমি তা থেকে রেহাই দিতে চাই। আমি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। সে শিক্ষা নিয়ে দেশে কিংবা বিদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর গুরুত্ব দিতে চাই। সবকিছুর মূলে আমি যা বলতে চাই আমার এলাকার সন্তানেরা যেন স্বপ্ন দেখতে শিখে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারে। দেশপ্রেমের বাইরে যেন তাদের কোনো স্বপ্ন না থাকে আমি সেভাবেই কাজ করতে চাই।