কমছে জনসংখ্যা, বাড়ছে কর্মক্ষমতা
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। বেড়েছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জনসংখ্যা হবে ২০ থেকে ২১ কোটি। এরপর এ সংখ্যা খুব একটা বাড়বে না। সমান্তরালে চলবে জন্ম-মৃত্যুর হার।
urgentPhoto
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষকে কর্মদক্ষ করে কাজে লাগানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে বয়স্ক মানুষকে নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
একটা সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল কল্পনাতীত। স্বাধীন বাংলাদেশের পাঁচটি আদমশুমারি লক্ষ করলে বিষয়টি বোঝা যায়। আদমশুমারিতে দেখা যায়, ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ১৯৮১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৩২ শতাংশে।
১৯৯১ সালে এই হার ছিল ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২০০১ সালে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ আর ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী সেই হার কমে এসে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৭-এ। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে কমছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে,গত ১০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বৃদ্ধির এ হার খুব শিগগির ১ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। ২০৫০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার শূন্যের কাছাকাছি এসে স্থিতিশীল হবে।
জানতে চাইলে জনসংখ্যান পরিষদ, বাংলাদেশ শাখার প্রধান ড. উবায়দুর রব বলেন, ‘গড়ে এখন বছরে প্রায় ২০ লাখ লোক বাড়ছে। সেই হিসাবে যদি আপনি ধরে নেন, ২০ বছরে চার কোটি যুক্ত হবে। আগামীতে ২০ লাখের পরে ১৮ লাখ হবে। যোগ হওয়া আস্তে আস্তে কমে আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটা পর্যায় যেটা আমরা বলছি, ২০৫০ সালের কাছাকাছি আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর পর ২০-২১ কোটির কাছাকাছি গিয়ে আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্থিতিশীল হবে। এর বেশি হবে না।’
উবায়দুর রবের কথা অনুযায়ী, জন্ম ও মৃত্যুর হার চলবে সমান্তরালভাবে। ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও। আর তাই দেশের ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষকে কাজে লাগানোর সময় এখনই।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জনসংখ্যাবিদ ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, ‘সে জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে এই জনসংখ্যাগত এই সময়টাকে (২০ থেকে ৩০ বছর সময় যখন শিশু ও নবজাতক মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, জন্মহারও কমে) সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারা। দ্বিতীয়ত, বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির গতিটা বাড়বে, এরপর যদি এখন থেকে আমরা ব্যবস্থা না নিই, তাহলে এই বাংলাদেশ একটা বৃদ্ধ মানুষের দেশে পরিণত হবে। সেটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাল্যবিবাহ, অপ্রাপ্ত ও অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের মতো বিষয়গুলো এখনো যেহেতু বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ, তাই প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব।
‘নারী ও শিশু সবার আগে,বিপদে-দুর্যোগে প্রাধান্য পাবে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ শনিবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০১৫-এর প্রতিপাদ্যকে সার্থক এবং এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে সারা দেশের প্রতিটি বিভাগ,জেলা ও উপজেলায় আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।