শাস্তি না হওয়ায় পানি খাতে দুর্নীতি বাড়ছে : টিআইবি
দুর্বল আইন ও এর সঠিক বাস্তবায়নের নির্দেশিকার অভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হালনাগাদ ও আধুনিকায়ন না হওয়ায় নাগরিক সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক ও দৃশ্যমান শাস্তি না হওয়ায় দুর্নীতি করার প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার : বর্তমান প্রেক্ষিত ও উন্নয়ন সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক বেইজলাইন গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। আজ রোববার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। টিআইবি ও বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি নেটওয়ার্কের (বাউইন) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। বাউইন হচ্ছে ২০০৯ সালে টিআইবির উদ্যোগে পানি খাতের ১৭টি বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্ক।
গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও বাউইনের সমন্বয়কারী সনজীব বিশ্বাস সঞ্জয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত এ গবেষণায় ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ম লঙ্ঘন, আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া, দুর্নীতির শাস্তি না হওয়া ও জবাবদিহিতার তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে ঢাকায় পানি সংকটের মূল কারণের জন্য ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের অক্ষমতাকে দায়ী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো দায়ী করা হয়েছে বেআইনিভাবে নদী, খাল দখল ও শিল্পবর্জ্য ফেলা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নকে।
প্রতিবেদনে ঢাকা ওয়াসার যেসব সমস্যা তুলে ধরা হয়, তা হচ্ছে চাহিদার বিপরীতে পানি সরবরাহ প্রদানে ক্ষমতার অভাব, পানি বিতরণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে দালালসহ বিভিন্ন অনুমোদনহীন ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ, কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও বৈধতার অভাব।
ঢাকা ওয়াসায় অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক নেতা ও দালালের মাধ্যমে পানি সরববরাহ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত কাজের অনুমোদন ও নিয়োগ দেওয়া, ভূমি দখল ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা কারিগরি নির্দেশনা না মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, বাঁধের জন্য নির্দিষ্ট ব্যাগ ব্যবহার না করা, ড্রেজার ব্যবহারে অনিয়ম এবং ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে পাউবোর বিরুদ্ধে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাউবোকে পুরোনো সমস্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা, দুর্যোগের নতুন ধরন, বিষাক্তকরণ, পানিদূষণ, জলপথের অবৈধ দখলের মতো নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে পাউবোর নতুন নীতির অভাব আছে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যারা দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের সত্যিকার অর্থে আইনগতভাবে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি যে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটি করার ক্ষেত্রে ঘাটতির কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সুশাসন ও শুদ্ধাচারের ক্ষেত্রে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, গ্রাহকের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা সব এলাকায় তাঁদের সেবা দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে সেবা প্রদানে আয় অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক বৈষম্য বিরাজ করছে। দালালদের কারণে পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একাংশের উৎপাত এখনো বিরাজমান। ঢাকা ওয়াসা সম্পর্কে গ্রাহকের সন্তুষ্টির মান সন্তোষজনক নয়।
জাতীয় পানি আইনের আলোকে জাতীয় পানিসম্পদ কাউন্সিলকে পর্যবেক্ষক হিসেবে কার্যকর করা, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদের উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, পানি ব্যবস্থাপনায় শুদ্ধাচার নিশ্চিত করার জন্য ইস্যুভিত্তিক গবেষণা করাসহ নয়টি সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।