‘কিছু কিছু মন্ত্রী মন্তব্য করেন, এটা কি ফেয়ার?’
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধানকে নিয়ে নিয়ে কিছু কিছু মন্ত্রীর মন্তব্য ঠিক কি না, সেটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা।
আজ মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসংক্রান্ত মামলার আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এই মন্তব্য করেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এজলাসে তো আপনার এ কথা বলার দরকার নেই। শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রে দেশের মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
এর একদিন পর মাহবুবে আলমের উদ্দেশে এস কে সিনহা বলেন, ‘আপনারা প্রধান বিচারপতি ও আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা কি কিছুই বলতে পারব না? আমরা কি আদালতে বসে মন্তব্য করতে পারব না?’
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে কিছু কিছু মন্ত্রী মন্তব্য করেন। এটা কি ফেয়ার (ঠিক)? আপনাকে প্রশ্ন করছি।’
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়।’
এর পর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন এ কথা বলছেন? বিচারে আমরা রাজনৈতিক মন্তব্য দেই না, বিচার বিভাগসংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে, যেমন : আজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্পর্কে না বললে কী থাকল? মাসদার হোসেন মামলা, আমরা রাজনৈতিক কথা বলছি না।’
শুনানিতে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিধির খসড়ায় গেজেট প্রকাশের বিষয়টি আমরা সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুসারে বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা সেখানে সরকারের কথা বলেছেন।’
এরপর প্রধান বিচারপতি মাহবুবে আলমের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজনৈতিক কথা বলছি না। কিছু কিছু মন্ত্রী, মিস্টার অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনারা বিচারপতিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। পত্রিকায় এসেছে, একজন বলেছেন, কোর্ট প্রসিডিংসে, আদালতের কার্যক্রমে যা হয়, তা নিয়ে সংসদ ও পাবলিকলি (প্রকাশ্যে) কথা বলার সুযোগ নেই।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘১১৬ অনুচ্ছেদ ও ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিয়ে মাসদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে। এখন যদি আপনার কাছ থেকে ব্যাখ্যা শুনতে হয়, তাহলে দুঃখজনক।’
মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯-এর ১৪টি ধারা ও উপধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া তিন রিটকারীর সাজা অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং জরিমানাও বাতিল করেছেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯-এর কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।